• শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ০৪:৩৭

ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দাপটে অনিরাপদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

প্রতিনিধি: / ৫৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দিনে-রাতে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দাপটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন অনিরাপদ। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভয়রাণ্যে পরিণত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। অথচ এ মহাসড়কটি দেশের লাইফলাইন। কিন্তু ওই মহাসড়ক এখন যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। দিনে-রাতে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ডাকাতি চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও। আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা করতে চান না মহাসড়কে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা। আবার অনেক সময় পুলিশও শুধু জিডি নিয়েই দায় শেষ করেন ডাকাতির ঘটনায় ছিনতাইয়ের মামলা। তবে কিছু ঘটনায় হওয়া মামলায় ডাকাত দলের সদস্যরা ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আসামিরা আবারো ডাকাতিতে জড়াচ্ছে। যানবাহন চালক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন ঢাকার বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী, রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও স্থানীয় তৈরি পোশাকশ্রমিকরা। ওই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা অতিষ্ঠ। সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে সম্প্রতি কুমিল­ার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ বাজার এলাকায় হালকা মোটরযানের চালকরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ওসব যানবাহনের চালকদের মতে, মহাসড়কে মানুষ ডাকাত ও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সব হারালেও মামলা করতে চায় না। কারণ তাতে প্রতিকারের বদলে আইনি বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়। আর কাঁচপুর থেকে চান্দিনা এলাকার মধ্যে গত ছয় মাসে শতাধিক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি। আর গত ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে অন্তত ১৯টি ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। বর্তমানে মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে চালকদের জীবন। কারণ ডাকাত দল যাত্রীদের সর্বস্ব নিয়ে পালানোর সময় কৌশলে চালকদেরই অপরাধী বানাচ্ছে। ফলে যানবাহনের চালকরা বিনা অপরাধে আইনি ঝামেলার শিকার হচ্ছে।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের তিনটি থানায় গত ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জ থানায় ১৩টি, বন্দরে ৪টি ও আড়াইহাজারে ২টি মামলা হয়েছে। ওসব মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ৩৫ জন গ্রেপ্তার হয়। গত ছয় মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ছিনতাই মামলা হলেও সোনারগাঁ থানায় কোনো মামলা হয়নি। যদিও ওই সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ অংশে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যদিও মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা বিচার করা যাবে না। কারণ মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে আসে। আর মামলা হয় আরো কম। কোনো ক্ষেত্রে ডাকাতির মামলা না নিয়ে চুরি কিংবা ছিনতাই মামলা নেয়া হয়। কখনো আবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ভুক্তভোগীদের থানা থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফলে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি হলেও পুলিশের খাতায় উল্লেখ থাকে তার সামান্যই।

সূত্র আরো জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন শুধু রাতে নয়, দিনেও পুরোপুরি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সমপ্রতি মহাসড়ক সংলগ্ন দোকানপাটেও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। রাতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়লে যানজট সৃষ্টি হয়। তখন কখনো ধীরগতিতে আবার কখনো থেমে থেমে গাড়ি চলাচল করে। ওই সময় ডাকাতরা সাধারণত ঢাকা থেকে আসা প্রবাসী যাত্রী বহন করতে পারে সম্ভাব্য এমন প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলোকে লক্ষ্য করে অস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে হামলা চালায়। মুহূর্তেই তারা গাড়ির কাচ ভেঙে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সবকিছু লুটে নেয়। দেড় থেকে দুই মিনিটে তারা ডাকাতি শেষ করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ান বাইপাস মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রূপগঞ্জ থানার আওতাধীন তিনশো ফিট, কাঞ্চন সেতু, গোলাকান্দাইল, তারাব সেতু, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে সানারপাড়, কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম অংশ, বন্দরের মলিবাগ, মদনপুর ও কেওডালা, আড়াইহাজারের বান্টি এবং সোনারগাঁ থানার কাঁচপুর, দড়িকান্দী, টিপরদী, সাদীপুর, মোগড়াপাড়া, আষাড়িয়ারচর ও মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে দাউদকান্দি ও চান্দিনা থানা এলাকা, বুড়িচংয়ের নিমসার, কালাকচুয়া, সৈয়দপুর এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রামের কয়েকটি এলাকায় ওসব ঘটনা বেশি ঘটছে।

এদিকে এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক খায়রুল আলম জানান, পুলিশ মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধে কাজ করছে। এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকেও রাতে মহাসড়কে টহল বৃদ্ধি করার জন্য বলা হয়েছে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, নারায়ণগঞ্জের মহাসড়কগুলোতে বছরের পর বছর ধরে ডাকাতি-ছিনতাই চলছে। অপরাধীরা মূলত প্রবাসীদের গাড়িতে ডাকাতি করে। গাড়ির চাপের কারণে যখনই প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলো ধীরগতিতে চলাচল করে, তখনই ওসব অপরাধী একযোগে গাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। বর্তমানে চিহ্নিত এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ টহল শুরু করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ডাকাত সরদারও গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু বারবার তাঁরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com