শবেকদর অস্পষ্ট রাখা হয়েছে যে কারণে

0
25

ধর্মপাতা (জাওয়াদ তাহের): রমজান মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন হবে। ভাগ্যবানদের জন্য রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এ মাসে মহামূল্যবান সম্পদ। আমার কাজ হচ্ছে সেগুলো কুড়িয়ে নেওয়া। মহা মূল্যবান এই মাসের বড় একটি পাওয়া, হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’। যার ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটা (অর্থাৎ কোরআন) শবে কদরে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো শবেকদর কী? শবেকদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)
এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদা অতুলনীয়। তাই নবী করিম (সা.) এ রাত পাওয়ার আশায় রমজানের শেষ দশ দিন নিয়মিত ইতিকাফ করতেন। কারণ এ রাত অনুসন্ধান করাও ইবাদত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
এই পূর্ণময় রাতকে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য অনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। মহামান্বিত এ রাতকে অস্পষ্ট রাখার মাঝেও বেশ কিছু হিকমত ও রহস্য নিহিত আছে-
১. কদরের রাত নির্ধারিত থাকলে অনেক মানুষ এমন হতো যে শুধু ওই রাতেই ইবাদত করত, অন্য রাতে ইবাদতের প্রতি অতটা গুরুত্ব দিত না। এজন্য আল্লাহ তাআলা এ রাতকে অস্পষ্ট রেখেছেন, যাতে রমজানের শেষ দশকে মুসলমানরা পুরোদমে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকে। (ফাতহুল বারি, ৪/২৩২)
২. মানুষের স্বভাব লুক্কায়িত জিনিস সন্ধানে একটু বেশি মরিয়া হয়ে থাকে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই লাইলাতুল কদরের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। এই রাতে ইবাদত করে তারা এক অন্যরকম স্বাদ অনুভব করে। যারা ইবাদত করে আনন্দ লাভ করে। তারা এই লুকানোর মাঝেও তা অনুভব করে থাকে।
৩. ওবাদা ইবনুস সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৩)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, মুসলমান পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআলা আমাদের থেকে অনেক বরকত ও কল্যাণ তুলে নেন। এটা আমাদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা যে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধ করে দেয়।