ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনলাইনে শতভাগ ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে উত্তরবঙ্গগামীসহ অধিক চাহিদা রয়েছে, এমন সব রুটের। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে এবং ‘রেল সেবা’ অ্যাপে এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এদিন সকাল ৮টায় অনলাইন টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরুর কয়েক মিনিট পর বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি ও পদ্মা এক্সপ্রেস-এই চারটি ট্রেনের কোনো টিকিট নেই। একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা থেকে রংপুরগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও। তবে যেসব রুটে চাপ কম অর্থাৎ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেটের সব ট্রেনেই টিকিট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা রুটেও সিট খালি দেখা গেছে। তবে তা সীমিত। তবে ৭ এপ্রিল শুধু আগামী ১৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রেলের ওয়েবসাইটে বিক্রি করা হবে, ৮ এপ্রিলে ১৮ এপ্রিলের টিকিট, ৯ এপ্রিলে ১৯ এপ্রিলের টিকিট, ১০ এপ্রিলে ২০ এপ্রিলের টিকিট এবং ১১ তারিখে বিক্রি হবে ২১ এপ্রিলের ঈদযাত্রার টিকিট। অনলাইনে টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে যাত্রী চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সহজ ডট কমের নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথবলেন, প্রথম দিকে প্রতি মিনিটে এক হাজার করে টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ সময় আমাদের সার্ভার যথেষ্ট অ্যাকটিভ ছিল। কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনি। সহজ ডটকমের সূত্র জানায়, সাইটি প্রতি মিনিটে ৮ হাজার টিকিট বিক্রি করতে সক্ষম। একসঙ্গে ১০ লাখ লোক তাদের সাইটে প্রবেশ করতে পারবে। এদিকে অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি শুরু হওয়াই বদলে গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনের চিত্র। গত বছরগুলোর মতো নেই অগ্রিম টিকিট কেনার কোনো ভিড়। পুরো স্টেশনজুড়ে নীরবতা। ঈদের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু ১৫ এপ্রিল। আর আজ ৮ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৮ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল বিক্রি হবে ২১ এপ্রিলের ঈদযাত্রার টিকিট। ঈদের ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১৫ এপ্রিল থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ১৬ এপ্রিল ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনসমূহের ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে না।
যাত্রার দিন কাউন্টারে মিলবে ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট: ঈদ এলেই যেখানে প্রতিবছর অগ্রিম টিকিট পেতে কমলাপুর স্টেশনে দীর্ঘ সারি আর সীমাহীন ভোগান্তি থাকতো, সে দৃশ্য এবার আর থাকছে না। তবে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে শোভন শ্রেণির (নন এসি) মোট আসনের ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট (স্ট্যান্ডিং) যাত্রার দিন কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। রেলওয়ে জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত ব্যক্তিরাই এবার কিনতে পারবেন টিকিট।
যেভাবে কাটতে হবে টিকিট: আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কেনা যাবে। ১৭ থেকে ৩০ এপ্রিলের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হবে। তবে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে শোভন শ্রেণির (নন এসি) মোট আসনের ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট (স্ট্যান্ডিং) যাত্রার দিন কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। কীভাবে যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন, সে বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে গত ২৫ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঈদুল ফিতরে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট (১৭-৩০ এপ্রিল) শুধু অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করা যাবে। এ ছাড়া বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেটিং ব্যবস্থা ও অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়কৃত টিকিট রিফান্ডের (ফেরত) ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাত্রীদের প্রতি রেলওয়ের জানানো নির্দেশনা ও শর্তাবলি হচ্ছে- আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশীরা জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন যাচাইপূর্বক নিবন্ধন করবেন। নিবন্ধনের জন্য মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইজ <ংঢ়ধপব> ঘওউ নম্বর <ংঢ়ধপব> জন্ম তারিখ (জন্ম তারিখের ফরম্যাট- জন্ম সাল/মাস/দিন) লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন সফল বা ব্যর্থ হয়েছে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া হবে। ওয়েবসাইট অথবা ‘জধরষ ঝযবনধ’ ধঢ়ঢ়-এ সঠিক ঘওউ নম্বর ও জন্ম তারিখ াবৎরভু পূর্বক অন্যান্য তথ্য দেওয়া সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর প্রদান ও পাসপোর্টের ছবি আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। ১২-১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রদান ও জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। সফলভাবে এনআইডি/পাসপোর্ট/জন্ম নিবন্ধন যাচাইপূর্বক নিবন্ধন ব্যতীত কোনো যাত্রী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন না। স্ট্যান্ডিং যাত্রীদের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি আসনের টিকিট কিনতে পারবেন। তবে অনলাইনে টিকিট কেনার সময় সহযাত্রীদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিপিবদ্ধ করতে হবে। ভ্রমণকালে যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি/সফটকপি অথবা পাসপোর্ট/ছবিসংবলিত আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। টিকিটের ওপরে মুদ্রিত যাত্রীর নাম ও এনআইডি নম্বর যাত্রী কর্তৃক প্রদর্শিত পরিচয়পত্রের সঙ্গে না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রথমবারের মতো এবার ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঈদের সময় কমলাপুরের যে পরিবেশ তৈরি হয়, এটা রেলের জন্য খুবই বিব্রতকর। মানুষ দুই দিন কমলাপুরে থেকেও টিকিট পায় না। সব মানুষ টিকিট পাবে না। ঈদের সময় আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনলাইনে শতভাগ টিকিট দেওয়া হবে। কমলাপুরে গিয়ে টিকিটের জন্য যাত্রীদের যেন ঘুরতে না হয় এবং তারা যেন বাসায় বসে টিকিট কাটতে পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয় তবে সেটি আগামী ঈদে সংশোধন করা হবে।