কতটা গভীর, বিশ্ব ব্যাংকিং খাতের সংকট?

0
22

বিদেশ : সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা গেলেও, এখনও পরিষ্কার নয় কবে কাটবে বিশ্বের ব্যাংকিং খাতের সংকট। মার্কিন তিন ব্যাংকের পথ ধরে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আরও অসংখ্য ব্যাংক। ধস ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে নগদ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন বিশ্বের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকরা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের পতনে প্রকাশ পাচ্ছে বিশ্বের আর্থিক খাতের দুরাবস্থার চিত্র। শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস এজির কাছে বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে ব্যাংকটির দেউলিয়াত্ব ঠেকানো গেলেও, তা খাদের কিনারায় থাকা পশ্চিমা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কতটা উদ্ধার করবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। দুই সপ্তাহ আগে অনেকটা আকস্মিকভাবেই সিলিকন ভ্যালিসহ তিন ব্যাংকের পতনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থায়। যার ধাক্কা অনুভূত হয় এশিয়া, ইউরোপের প্রধান প্রধান সব পুঁজিবাজারেই। ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থার শক্তিশালী ভিত্তি থাকার কারণে মনে করা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ধসের প্রভাব খুব একটা পড়বে না ইউরোপের ব্যাংকিং খাতে। তাই সিলিকন ভ্যালির পতনের পর ইউরোপের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি নিয়ে তেমন কোনো খবরও প্রকাশ হয়নি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তবে গেল সপ্তাহে হঠাৎ করেই যখন সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের শেয়ারের দরের ২৫ শতাংশ পতন হয়, তখন তা অবাক করে বিশ্বের আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের। একপর্যায়ে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫৪ বিলিয়ন ডলারের সহায়তাও ব্যর্থ হয় ব্যাংকটির পতন ঠেকাতে। এ পরিস্থিতিতে নাটকীয়ভাবে ক্রেডিট সুইসকে কিনতে এগিয়ে আসে ব্যাংকিং জগতে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউবিএস এজি। ইউবিএস এজির ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণের মাধ্যমেই পরিষ্কার হয় বিষয়টি কতটা ঝাঁকুনি দিয়েছে বিশ্বের আর্থিক খাতে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দেয়া তথ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে ক্রেডিট সুইসকে রক্ষায় একজোট হন বিশ্বের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকরা। সুইজারল্যান্ড সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশও। মাত্র ৩২৩ কোটি ডলারে বিশ্বের সেরা ৩০টি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট সুইসের বিক্রি হয়ে যাওয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে বিশ্বের ব্যাংকিং খাতের সংকট কতটা গভীর। তবে ক্রেডিট সুইসকে রক্ষা করা গেলেও সামনে আরও বেশ কিছু ব্যাংকের মাথার ওপর ঝুলছে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি। মার্কিন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ সত্ত্বেও দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পারছে না দেশটির সেরা ব্যাংকগুলোর একটি ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অন্তত ২শ’ ব্যাংক। মার্কিন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আমানতকারীরা অর্ধেক আমানত তুলে নিলেও দেউলিয়া হতে পারে কমপক্ষে ১৮৬টি ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে তারল্য প্রবাহ। ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোকে দেয়া হচ্ছে জরুরি সহায়তা। তবে এসব পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখা আমানতকারীদের কতটুকু আশ্বস্ত করবে তা পরিষ্কার নয়।