বিদেশ : মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাস চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। যা তাইওয়ানের জন্য অবশ্যই দুঃসংবাদ। কারণ, বিশ্বে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া ১৪টি দেশের মধ্যে হন্ডুরাস অন্যতম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যা তাইওয়ানের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্র, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। খবর বিবিসির। প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন হন্ডুরাস যদি চীনের দিকে ফিরে যায়, তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয় এমন দেশের সংখ্যা কমে যাবে মাত্র ১৩টিতে। যদিও তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে কিন্তু চীন দ্বীপটিকে একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল বলে মনে করে যা একদিন আবার তাদের সঙ্গে একত্র হবে। এ কারণে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্রনীতি মূলত বাকি বিশ্বের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। এটি ‘ওয়ান চায়না পলিসি’ বা এক চীন নীতি নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন দিন দিন আন্তর্জাতিক বিশ্বে একটি প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠছে। বিশেষ করে, বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের আধিপত্য দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট সিওমারা কাস্ত্রো বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য বৈদেশিক সম্পর্ক প্রসারিত করা।’ তবে তাইওয়ানের সরকার বারবার হন্ডুরাসকে চীনের ‘পাতা ফাঁদে’ পা রাখতে নিষেধ করছে। তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা হন্ডুরাসকে বিষয়টি খুব সাবধানে বিবেচনা করতে এবং চীনের ফাঁদে না পড়তে বলেছি। আমি তাদের বলেছি, হন্ডুরাস ও তাইওয়ানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে।’চীন হন্ডুরাসের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলে বেইজিংও লাভবান হবে। কারণ, হন্ডুরাসের সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধ্যমেই তারা ওই অঞ্চলে পা রাখতে পারবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একজন নেতা হিসেবে তার ক্ষমতা আরও পোক্ত করেছেন। এমন সময়ে চীন সারা বিশ্বে তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। এছাড়াও, শূন্য কোভিড নীতির মাধ্যমে ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেরও লক্ষ্য রয়েছে দেশটির। তাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্টের এই ইচ্ছাকে আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা হন্ডুরাসের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক’ স্থাপনে আগ্রহী। এদিকে, এটি তাইওয়ানের জন্য একটি বিপদ সংকেত। কারণ, ২০১৬ সালে সাই ইং-ওয়েন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এই দ্বীপ দেশটি আট কূটনৈতিক মিত্র দেশ হারিয়েছে। কাস্ত্রো ২০২১ সালে হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হন। তিনি জানান, তিনি তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। যা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ। চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি জানিয়েছিলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় থাকবে। কাস্ত্রো চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছে ঘোষণা করার কয়েক সপ্তাহ আগে, তার সরকার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে আলোচনা করছিল বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২১ সালে বেইজিং হন্ডুরাসকে অনুরূপ প্রকল্পের জন্য ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে হন্ডুরাসের আগ্রহের ঘোষণাটি আসে যখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই আগামী মাসে মধ্য আমেরিকায় মিত্রদের সফর করার পরিকল্পনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথাও রয়েছে তার। যা বেইজিং-ওয়াশিংটন উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।