বিনোদন: কলকাতায় আর জি কর কান্ডে এক মেয়ে চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গসহ পুরো ভারত উত্তাল। এবার যৌন হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে দক্ষিণের মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতেও। একটি বা দুটি নয়, যৌন হেনস্তার অভিযোগে নথিভুক্ত হয়েছে ১৭টি মামলা। ‘মি টু’-ঝড় সামলাতে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ নিয়ে সরব অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ খুশবু সুন্দর। অভিযোগ আছে, মালয়ালম বিনোদনজগতে অভিনেত্রী হেনস্তা যেন খুবই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে এবার এই বিনোদনজগতের ভেতরে চলছে তোলপাড়। ভেঙে দেওয়া হয়েছে মালয়ালম চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বা এএমএমএকেও। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন তারকা এবং নির্মাতাকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এসব ত্বরিত পদক্ষেপে হেমা কমিটির সাহসী নারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন খুশবু সুন্দর। এমনকি শৈশবে নিজের সঙ্গে ঘটা অন্যায়ের কথা আবারও সবাইকে খোলাখুলিভাবে জানালেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে খুশবু লিখেছেন, ‘অভিনন্দন সেসব নারীকে, যারা তাদের জায়গায় অটল থেকে বিজয়ী হয়েছেন।’ দক্ষিণের যে নারীরা সংকোচ না করে এগিয়ে এসেছেন, তাদের প্রশংসাও করেছেন খুশবু। অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, ‘অনেক সময় দুর্ব্যবহার, যৌন হেনস্তা- এসবের শিকার হয়েও নারীরা তাদের কর্মজীবনকে এগিয়ে নিতে আপোশ করেন। কেন একজন নারীকে এসব কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হবে? পুরুষদের দোষ হলেও নারীদেরই এর খেসারত বহন করতে হয়। তাই আপনি শুধু আওয়াজ তুলুন। আপনার আওয়াজ ক্ষত নিরাময় এবং মূল থেকে রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।’ শৈশবে নিজেরই জন্মদাতার হাতে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন খুশবু। লিখেছেন, ‘আমার বিষয়টি নিয়ে আগেই কথা বলার দরকার ছিল। কিন্তু সেটি আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো প্রভাব ফেলত না। আমি পড়ে গেলে যার শক্ত ঢাল হওয়ার কথা ছিল, সেই মানুষটার হাতেই নির্যাতিত হয়েছি।’ এর আগে বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, মাত্র আট বছর বয়স থেকে কীভাবে বাবার হাতে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। যা চলেছিল টানা ১৫ বছর। কিন্তু আর সহ্য করতে না পেরে ১৬ বছর বয়সে এই ব্যাপারে আওয়াজ তুলেছিলেন। এরপরই তাকে ত্যাগ করেন জন্মদাতা। শুরু হয় খুশবুর একার সংগ্রাম। গত ১৯ আগস্ট কেরালার হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে হেমার নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি মালয়ালম চলচ্চিত্রজগতে নারীদের কাজের পরিবেশ এবং যৌন হেনস্তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর সব ঘটনা সামনে আসার পর বিনোদনজগতের পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। প্রতিবেদন প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। গঠিত হয়েছে সাত সদস্যের তদন্ত দল। সর্বশেষ যৌন হয়রানির ঘটনার অভিযোগ করেন অভিনেত্রী সোনিয়া মালহার। তার অভিযোগ, ২০১৩ সালে ছবির সেটে তার শ্লীলতাহানি করেন একজন অভিনেতা। শুধু তা-ই নয়, অভিনেতা এম মুকেশ, জয়সুরিয়া, মানিয়ানপিল্লা রাজু ও ইদাভেলা বাবুর বিরুদ্ধে শুটিংয়ে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী মিনু মুনিরও। মুখ খোলার পর নানা হুমকি পাচ্ছেন এই অভিনেত্রী। সামাজিক মাধ্যমে হুমকিবার্তার স্ক্রিনশটও পোস্ট করেছেন তিনি। এর আগে এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী মুনির। তিনি বলেন, ‘একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করার সময় আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমি শৌচাগার থেকে বের হওয়ার পর জয়সুরিয়া আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। তখন আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমি দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।’ তার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছুক হলে আরও কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মুনিরকে প্রস্তাবও দেন জয়সুরিয়া। পাশাপাশি সাবেক এএমএমএ সেক্রেটারি ইদাভেলা বাবু সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে সাহায্য করার নামে ফ্ল্যাটে ডেকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন অভিনেত্রীকে। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন সিপিএমের বিধায়ক অভিনেতা মুকেশের অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে তাকে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। সাক্ষাৎকারে মিনু মুনির বলেন, ‘মালয়ালম চলচ্চিত্রে প্রচুর শোষণ হচ্ছে। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী। আমি যখন চেন্নাইতে চলে আসি, তখন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি, কী হয়েছে?’ যৌন হেনস্তা নিয়ে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী।
https://www.kaabait.com