• বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩০

৭ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

প্রতিনিধি: / ৫৭ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪

দেশের সাত নদীর ১৪ স্টেশনের পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে বেশির ভাগ অঞ্চলের নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। কিছু এলাকার নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। আর ভারী বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি এবং চট্টগ্রামের ভুমিধসের শঙ্কার কথাও জানিয়েছে। ফেনী নদীর রামগড় স্টেশনের পানি ২০০, খোয়াই নদীর বাল্লা স্টেশনে পানি বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই নদীর হবিগঞ্জ স্টেশনে পানি ১৬৫, গোমতীর নদীর কুমিল্লা স্টেশনের পানি ১১৮, মনু নদীর মৌলভিবাজার স্টেশনে পানি ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সব মিলিয়ে কুশিয়ারা নদীর ৪ স্টেশন, মনু নদীর ২ স্টেশন, খোয়াই নদীর ২, গোমতী নদীর ২ হালদার ২, মুহুরী ও ফেনী নদীর দুই স্টেশনের পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে এখনও। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সংস্থাগুলো আরও বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীগুলোর আশপাশের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পানি কমছে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে দেশের ১২টি জেলায়। ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল ¯্রােতের কারণে বন্যার পানিতে ডুবে, পাহাড় ধসে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত সোমবার থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। গত বুধবার থেকে ফেনীসহ আট জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। তবে তার কয়েকদিন আগে থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে অনেক জেলায়। এরপর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে গত বৃহস্পতিবার আরও চার জেলার অনেক জায়গা তলিয়ে যায়। বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো- ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ল²ীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে ফেনীর অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কক্সবাজার: কক্সবাজারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে আবদুস শুক্কুর (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার মেয়ে মোস্তফা খানম (২০) গুরুতর আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) এবং ঈদগড় ইউনিয়নের বৈদ্য পাড়ার চচিং রাখাইন (৫৫)। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- গর্জনিয়া ইউনিয়নের ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫) এবং ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লম্বরিপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মো. জুনাইদ (১০)।
চট্টগ্রাম: গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীতে বন্যাদুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঘরে বন্যার পানি ঢুকে গেলে সাকিব আইপিএসের সংযোগ খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে তিনদিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাকসাম উপজেলায় খালিদ মাহমুদ নামে এক আলিম পরীক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তিনি বন্যার্তদের জন্য পানি পৌঁছে দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। একই দিন বিকেলে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে লাকসাম উপজেলার একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। লাকসাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে ওই আইনজীবী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রীকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে যান তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বুধবার চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় মাথায় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি ব্রিজের নিচে তলিয়ে যান কেরামত আলী। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলের কাছেই তার লাশ ভেসে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় আরও একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম এখনো জানা যায়নি।
নোয়াখালী: বুধবার নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বন্যার পানি ঘরে ঢুকে আইপিএস নষ্ট হওয়ায় সেটি মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাকন কর্মকার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
রাঙামাটি: রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী নদীতে ডুবে শ্রেষ্ট চাকমা (০৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের কুকুরমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে সুবর্ণা আক্তার (২৩) নামে এক অন্তঃসত্ত¡া নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ঘরে পানি ওঠায় পাশের বাড়ি যাওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে একটি গর্তে পড়ে ডুবে যান তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com