স্পোর্টস: গেল বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বড় শিরোনাম হয়ে আসেন শ্রীলঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো পথচলা শুরু করে টাইগার বাহিনী। প্রথম বারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও তাকে ছাড়া আর কারো ওপরে ভরসা করতে পারেনি বিসিবি। ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে পথ দেখাচ্ছেন। দল সেরা আটে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পরই তিনি সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। হয়তো জানেন এই পর্বে বাংলাদেশ তেমন সুবিধা করতে পারবে না, কিংবা এইটুকু অর্জনের পরই তৃপ্তির ঢেকুর তুলে নিজের দায় সেরেছেন! সব মিলিয়ে তিনি কি এখন স্বস্তিতে রয়েছেন? সেরা আটে টাইগারদের পারফরম্যান্স তাকে কি স্বস্তিই এনে দিচ্ছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার আগে একটু স্মৃতি হাতড়িয়ে নেওয়া যাক। একবার দেশসেরা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি সহকারী কোচ হিসেবে হাথুরুর সঙ্গে কাজ করতে চান? তিনি নেতিবাচক উত্তর দিয়েছিলেন। বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপের (ওয়ানডে) পর কোচিং স্টাফদের প্রায় অর্ধেক সদস্য চলে গেছে এবং আমি যতটুকু শুনেছি যে, তারা তার (হাথুরুর) সঙ্গে কাজ করতে চায় না। যদি তারাই কাজ না করতে চায়, তাহলে আমি কীভাবে করব! আমি ব্যাপারগুলো জানি এবং আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। আর তা না হলে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হতে আমি অনিচ্ছুক।’ ভারতে অনুষ্ঠিত ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরাম, পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ, ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডরমট ও কম্পিউটার বিশ্লেষক শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা আর নতুন চুক্তি না করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম মেয়াদে কাজের সময়ে ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এবারের বিশ্বকাপে আইসিসির এক সাক্ষাৎকারে হাথুরুকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সুযোগটি আমরা ক্রিকেটারদের থেকে ছিনিয়ে নিতে চাই না। তবে এর মানে এমন না যে, তাদের যা খুশি করার লাইসেন্স আছে। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে দলের প্রতি। ভালো কিছু করার জন্য তাদের সব সময় স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটি জাতীয় দল, ক্লাব ক্রিকেট কিংবা যেখানেই হোক তারা আনন্দের সঙ্গে খেলছে। সুতরাং আমরা তাদের স্বাধীনতার বিষয়টি আগে রাখি।’ প্রথম মেয়াদে ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব পালন করার আগে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়ার পর হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার কোচও। কিন্তু নিজ দেশে টিকতে না পেরে ২০২০ সালে আবার অস্ট্রেলিয়ান দলটিতে ফিরে যান তিনি। সেখান থেকে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন। প্রথম মেয়াদে দায়িত্বে থাকাকালীন অনেক বিতর্কে হাথুরুর নাম জড়ায়। মাশরাফি বিন মর্তুজাকে টি-টোয়েন্টি ছাড়তে চাপ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। টেস্ট থেকে বাদ দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। মুমিনুল হককেও বাদ দিয়ে পড়েছিলেন বিতর্কে। তবে সেগুলোতে নাম জড়ালেও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় কিছু সাফল্য এসেছে সেই মেয়াদকালেই। পরপর তিন ওয়ানডে সিরিজ জয়, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা এবং ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ হয়েছিল হাথুরুসিংহের সময়েই। তার সময়ে ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিল বাংলাদেশ দল। সব মিলিয়ে তার অধীনে ৫১টি ওয়ানডে খেলে ২৫টিতে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সে সময় সাকিবরা খেলেছিলেন ২১টি টেস্ট। এর মধ্যে জয় এসেছিল ৬টিতে, যা বাংলাদেশের কোনো কোচের অধীনে সর্বোচ্চ টেস্ট জয়ের রেকর্ড। ১১ হারের বিপরীতে ড্র ছিল চারটি। আর ২৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জয় পায় ১০টিতে। সবকিছু বিবেচনায় তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ করে আনা হয়। এই যাত্রায় প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বাজিমাত করেন তিনি। পরে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হিসেবে এশিয়া কাপে সুবিচার করতে পারেননি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারিয়ে শুরুটা দারুণভাবে করেছিল বাংলাদেশ। তবে ইংল্যান্ড ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়ার পর হুট করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন টাইগাররা। টানা ছয় ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয়েছিল সাকিব আল হাসানের দলকে। এমনকি আইসিসির সহযোগী সদস্য নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও বড় ব্যবধানে হেরেছিল টাইগার বাহিনী। এ প্রসঙ্গে হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘মাত্র সাত মাস হয়েছে দায়িত্ব নিয়েছি। সাত মাসে আমার খুব বেশি কিছু করার ছিল না। আমি যেটা করেছি সেটা হলো, দলটা যেখানে ছিল সেখান থেকে নিয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করেছি। আসলে আমার কাজটা শুরু হবে বিশ্বকাপের পর।’ ভারতে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপের পর অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা আটে তুলেছেন। কিন্তু এই পর্বে সেই কাজের প্রমাণ রাখতে পারেননি হাথুরু। সে কারণেই কি আগে থেকে নিজের সন্তুষ্টির কথা বলেছেন এই শ্রীলঙ্কান? হাথুরুসিংহকে নিয়ে ভারতীয় কিংবদন্তি সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছিলেন, ‘উনি একটু সময় দিলে ভালো করবে বাংলাদেশ দল। টি-টোয়েন্টি আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ ফরম্যাট। বাংলাদেশে ট্যালেন্ট রয়েছে প্রচুর। এখন শুধু পাওয়ার হিটিংটা আয়ত্ত করতে পারলে হয়ে যাবে।’ হাথুরু সময় দিয়েছেন, কিন্তু পাওয়ার হিটিং কি আয়ত্তে এসেছে? যদি না আসে, তাহলে তার আগেই স্বস্তির ঢেকুর তোলাটা কি কোনো কিছু আড়ালের নামান্তর? সময় হলেই মিলবে সেই উত্তর।
https://www.kaabait.com