স্পোর্টস: অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে লোকের আগ্রহ থাকে সবসময়ই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজনের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই। কোভিড মহামারীর কারণে গত অলিম্পিকসে উৎসবের চেনা চেহারা ছিল না। এবার প্যারিস অলিম্পিকসের আয়োজকরা ঘোষণা দিয়েছেন, দারুণ আনন্দময় ও সাহসী এক অনুষ্ঠান আয়োজন করে দেখাবেন তারা। গর্বিত কণ্ঠে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এমন কিছু করা হবে এবার, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। ফুটবল ও রাগবি দিয়ে অলিম্পিকসের মাঠের লড়াই শুরু হয়ে গেছে বুধবার। গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে শুক্রবার। ১৯ দিনের আসরে এবার লড়াই হবে ৩১৯টি সোনার।
‘অনন্য’ আয়োজন
কোনো স্টেডিয়াম কিংবা নির্দিষ্ট আঙিনায় নয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বাইরে। আয়োজকদের প্রতিশ্রুত ‘সাহসী’ আয়োজনের মূল ছাপ এখানেই। উদ্বোধনী আয়োজনের ভেন্যু এবার প্যারিসের প্রাণ সেন নদী। এই নদীতে সুসজ্জিত অনেক নৌকায় হাজার হাজার অ্যাথলেট ভেসে বেড়াবেন। স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে প্রতিবার যে কুচকাওয়াজ হয়, এবার সেটিই ভিন্নভাবে হবে নৌকায়। পারফরমাররাও থাকবেন নৌকায়, সেখানেই পারফর্ম করবেন। অ্যাথলেট ও পারফরমাররা নৌকায় পাড়ি দেবেন ৬ কিলোমিটার পথ। উস্তালিজ সেতু থেকে চলা শুরু করবে নৌকা। নথু-দেম ক্যাথেড্রালের পাশ ঘেঁষে, আরও অনেক সেতুর নিচ দিয়ে অনেক গেটওয়ে ধরে প্যারিসের দর্শনীয় নানা জায়গা ছুঁয়ে আইফেল টাওয়ারের কাছে শেষ হবে এই ভ্রমণ। আয়োজকরা জানিয়েছেন, পুরো যাত্রাপথের আকাশ ও পানিতে থাকবে রঙের খেলা। পথে দুই ধারে নদীর তীরে, সেতুর ওপরে এবং চারপশে গান, নাচসহ থাকবে অনেক ধরনের পারফরম্যান্স। কোন কোন শিল্পীরা পারফর্ম করবেন, সেটি গোপন রাখা হয়েছে। তবে বড় চমকের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন আয়োজকরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শিল্প নির্দেশক থমা হুলি বলেছেন, ফ্রান্সে ও প্যারিস এবং অলিম্পিক গেমসকে বৃহত্তর চিত্রপটে উদযাপনের আয়োজন থাকবে এই অনুষ্ঠানে। পুরো অনুষ্ঠানের ১২টি ভাগ থাকবে। নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পীসহ সব মিলিয়ে পারফরমার থাকবেন প্রায় তিন হাজার।
কখন শুরু
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টা)। স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে, যখন সূর্যাস্তের সময় হবে, পুরো আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি হবে তখন। সব মিলিয়ে চার ঘণ্টার কাছাকাছি হবে এই আয়োজন।
দর্শক
একশর বেশি সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান উপস্থিত থাকবেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। নদীর তীর ধরে উদ্বোধনী আয়োজন উপভোগ করবেন ৩ লাখের বেশি দর্শক। পথের নানা জায়গায় থাকবে ৮০টি বিশালাকৃতির স্ক্রিন। ১ লাখ ৪ হাজার দর্শক এই অনুষ্ঠান দেখবেন টিকিট কেটে। টিকিটের দাম আড়াই হাজার ইউরোর বেশি। বিশেষভাবে তৈরি করা স্ট্যান্ড থেকে তারা এই আয়োজন উপভোগ করবেন। অ্যাথলেট থাকবেন সাড়ে ১০ হাজার। এছাড়াও ২ লাখ ২২ হাজার দর্শক দেখবেন নদীর তীর থেকে। অ্যাথলেটদের নৌকাগুলোয় থাকবে ক্যামেরা, যাতে টিভি পর্দায় কাছ থেকে দেখা যায় তাদেরকে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্টেডিয়ামের বাইরে অনুষ্ঠান আয়োজনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এটিই। এতটা দীর্ঘ পথজুড়ে অ্যাথলেট, দর্শক, আমন্ত্রিত অতিথি, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভীষণ কঠিন এক কাজ। অনেক দিন ধরেই তাই নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে ফ্রান্সের সরকার। প্রায় ৪৫ হাজার নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন শুধু এই অনুষ্ঠানের জন্যই। এর মধ্যে থাকবে ‘স্পেশাল ইন্টারভেশন ফোর্স।’ পুরো পথের বিভিন্ন ভবনের চূড়ায় বসানো হবে স্নাইপার। অ্যান্টি-ড্রোন পদ্ধতি কার্যকর করা হবে।
দর্শক ও স্থানীয় মানুষদের জন্য বিশেষ কিউআর কোড সম্বলিত পারমিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই থেকে নদীর তীরের কাছাকাছি যেতেও সেই কার্ড দেখাতে হচ্ছে সবাইকে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এসব এলাকায় গাড়ি প্রবেশের অনুমতি নেই। নিকটবর্তী সব মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে। পুরো পথের বিভিন্ন সেতুও বন্ধ থাকবে। আয়োজনের অংশ ছাড়া অন্য কোনো বিমান এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ও অন্যান্য হুমকি মাথায় রেখে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে ফরাসি সরকার। এরপরও কোনো জরুরি বা বিশেষ অবস্থার তৈরি হলে কিংবা প্রয়োজন মনে করলে, বিকল্প ব্যবস্থা ও বিকল্প উদ্বোধনী আয়োজনের পরিকল্পনাও সেরে রাখা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে আয়োজকরা বলছেন, সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় হুমকি হতে পারে কোনো একক আক্রমণকারী। এছাড়াও ক্ষুদ্র অপরাধ, নানা ধরনের প্রতিবাদ, এসবের শঙ্কাও আছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত মে মাসে সাঁত-এতিয়েনে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, অলিম্পিকের সময় ইসলামিক স্টেটের নামে ফুটল মাঠে আক্রমণের পরিকল্পনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে যাকে।
https://www.kaabait.com