পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ব্যয়ের দিক থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। যদিও এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। রাশিয়ার সরকারি সংস্থা রোসাটম রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। চুক্তির তথ্য অনুযায়ী, রূপপুরের মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এখন পর্যন্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এই কেন্দ্রের অন্য অবকাঠামো নির্মাণে খরচ হবে আরও অন্তত সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা বা দুই বিলিয়ন ডলার। এই হিসাব রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণব্যয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যার মধ্যে অন্যতম ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এঙ্টার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প। এটি অনুমোদন পায় ২০২২ সালে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। দুই বছরে প্রকল্পটির ১ শতাংশ কাজও করা সম্ভব হয়নি। অথচ আরও ৩৪৫ কোটি টাকা আবদার করা হয়। দুই বছর পর এখন নানা কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় ৯১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এই ব্যয় বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে কয়েক দফা বৈঠক শেষে কমিশন এই ব্যয় প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এঙ্টার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্চ মাস শেষে প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয় মাত্র চার কোটি ৮২ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব, উভয় ক্ষেত্রে অগ্রগতি মাত্র ০.০১ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দসহ চলমান প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি ১ শতাংশও বাস্তবায়ন না করে বর্তমানে এর ব্যয় ৩৪৫ কোটি টাকা (৯১.০৫ শতাংশ) বাড়িয়ে মোট ৭২৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদও আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ৩৪৫ কোটি টাকার বাড়তি চাহিদা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজই হয়নি। ফলে এখন অনেক কিছুই রেট শিডিউলের মধ্যে নেই। এছাড়া ফাইবার অপটিক্যালের ভাড়াও যোগ হচ্ছে। এটাসহ নানা কারণেই মূলত ব্যয় বাড়ছে। এদিকে, ১৭ ডিসেম্বর থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি বা ৫৯ হাজার কোটি টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিক্রয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। যাতে মধ্যস্থতা করেন ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। দেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আশা করা হচ্ছে, এটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর দেশের ২০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। নিজের ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের অভিযোগ, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
https://www.kaabait.com