পুরো মাথা ব্যান্ডেজ মোড়ানো, পিঠ-বুক ও দুই হাতের প্রায় পুরোটায় কালশিটে। তেমন কথাও বলতে পারছেন না। দেখলেই বুঝতে বাকি থাকে না, এ শরীরের ওপর ভয়ানক তাণ্ডব গেছে। এ অবস্থা রাজধানীর রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা পুলিশের এসআই আবদুল আল কাইয়ূমের। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া পৌনে তিন শ পুলিশ সদস্যের একজন তিনি। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬৯ জন পুলিশ সদস্য রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন আইসিইউতে। অনেকের অবস্থাই গুরুতর। গত মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালটিতে এ চিত্র দেখা যায়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের হামলায় রাজধানীসহ সারাদেশে এক হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩২ জন গুরুতর আহত। হামলার শিকার হয়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজন পুলিশ সদস্যের। সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। হামলা করেছে পুলিশের ওপরও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, পুলিশের ওপর এমন তাণ্ডব তারা কখনো দেখেননি। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দীসহ অন্যান্য হাসপাতালে অনেক পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন বা এখনো নিচ্ছেন। এসআই আবদুল আল কাইয়ূম বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে কর্মরত। গত বৃহস্পতিবার ডিউটি শেষ করে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসায় ফিরছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে নামামাত্রই পরনে পুলিশের প্যান্ট দেখে দুর্বৃত্তরা ‘পুলিশ পুলিশ’ বলে হামলা চালায়। এ সময় তার এক সহকর্মী সঙ্গে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা উভয়কে বেধড়ক পেটায়। একপর্যায়ে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কাইয়ূম। কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে কাইয়ূম বলেন, হামলায় অংশ নিয়েছিল উঠতি বয়সের ছেলেরা। বেশির ভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। তাদের বেশির ভাগ পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ছিল। এর বেশি কিছু আর বলতে পারছি না। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের মারধর করে মাটিতে শুইয়ে দেয় তারা। পুলিশ হাসপাতালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও পরিদর্শন) মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, শুধু এ হাসপাতালে ২৭৭ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। বর্তমানে ৬৯ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগেরই মাথায় আঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। হাসপাতালের নবম তলায় সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন নরসিংদীর ইটাখোলা হাইওয়ে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ফাঁড়িতে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের ওপর কয়েক শ মানুষ এসে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছুড়ি। এ সময় আমরা দুর্বৃত্তদের হামলায় সাত-আটজন গুরুতর আহত হই। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও ডিএমপিতে কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, পুলিশের ওপর এমন হামলা তারা কখনো দেখেননি। বেশির ভাগেরই মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এমনকি ডিউটিতে না থাকলেও পুলিশ পরিচয় জানলে হামলা করা হয়েছে। এদিকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩ পুলিশ সদস্য। নারায়ণগঞ্জের পিবিআইয়ে কর্মরত এসআই মাসুদ পারভেজ রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। গিয়াস উদ্দিনকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসএসআই মুক্তাদিরকে রামপুরা থানা এলাকায় হত্যা করা হয়।
https://www.kaabait.com