লাইফস্টাইল: আমরা প্রায়ই দেখি হঠাৎ করে মুখ বেঁকে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, চোখের পাতা বন্ধ না হওয়া কিংবা হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক রোগী আমাদের কাছে আসে। প্রাথমিকভাবে রোগী কিংবা তার স্বজন এটাকে শুধু স্ট্রোকের লক্ষণ মনে করে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রোগটি মুখের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর রোগের কারণে হয়। ফেসিয়াল পলসি কী সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ মুখের পেশিগুলোর নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। এ স্নায়ুর ক্ষতির ফলে মুখের পেশিগুলোর দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত ঘটে। একেই ফেসিয়াল পলসি বলে। ফেসিয়াল পলসি যেকোনো বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। এতে পুরুষ ও নারী সমানভাবে আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিস রোগী ও গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি।
ফেসিয়াল পলসির কারণ:
ফেসিয়াল পলসি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অজানা কারণে হয়, যা ইডিওপ্যাথিক পেরিফেরাল ফেসিয়াল পলসি বা বেলস পলসি বা মুখের পক্ষাঘাত নামে পরিচিত। এক পাশের (ইউনিলেটারাল) ফেসিয়াল পলসি হয়: স্ট্রোক, টিউমার (প্যারোটিড টিউমার, সিপি অ্যাঙ্গেল টিউমার), ডিমায়েলিনিশন, মধ্য কানের সংক্রমণ, প্যারোটিড সার্জারি, ভাইরাস (হারপিস সিমপ্লেক্স, হারপিস জোস্টার)। দুই পাশের (বাইলেটারাল) ফেসিয়াল পলসি হয়: জিবিএস (গুলিয়ান ব্যারে সিনড্রোম), লাইম (ব্যাকটেরিয়াল রোগ), এইডস সংক্রমণ, সারকোইডোসিস (লিম্ফ নোড, ফুসফুস, লিভার, চোখ, ত্বক বা অন্যান্য টিস্যুর প্রদাহ)।
লক্ষণ: কখনো কখনো বেলস পলসি লক্ষণ শুরু হওয়ার আগে রোগীর সর্দি হতে পারে। লক্ষণগুলো প্রায়ই হঠাৎ শুরু হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ পেতে দুই-তিনদিন সময়ও লাগতে পারে। লক্ষণগুলো প্রায়ই মুখের এক পাশে থাকে। এগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে।
এক চোখ বন্ধ করতে অসুবিধা হয়। মুখের এক পাশ থেকে খাবার পড়ে যাওয়ায় খাদ্য গ্রহণে অসুবিধা হয়। মুখের পেশির ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে মুখ ঝুলে পড়া, হাসার সময় বা কথা বলার সময় বেঁকে যাওয়া। অন্যান্য কারণে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মুখ বাঁকার সঙ্গে হাত-পা অবশ হতে পারে। জিবিএসের (গুলিয়ান ব্যারে সিনড্রোম) ক্ষেত্রে দুই পা অবশ হয়ে যাওয়া, যা পরবর্তী সময়ে দুই হাতে ছড়িয়ে যেতে পারে। লাইম রোগের ক্ষেত্রে সংক্রমণ হলে মাথাব্যথা। টিউমারের ক্ষেত্রে মুখ বাঁকার সঙ্গে সঙ্গে মাথাব্যথা ও খিঁচুনি হতে পারে। শুষ্ক মুখের পাশাপাশি শুষ্ক চোখ, যা চোখের ঘা বা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এক কানে উচ্চতর শব্দ শুনতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা: ফেসিয়াল পলসির জন্য একটি স্বাস্থ্য ইতিহাস গ্রহণ করে এবং সম্পূর্ণ নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা করে বেলস পলসি নির্ণয় করা যেতে পারে। কখনো কখনো মুখের পেশি ও পেশি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলো পরীক্ষা করতে ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি (ইএমজি) পরীক্ষা করা হয়। লাইম রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। স্ট্রোক ও টিউমারজনিত রোগ নির্ণয়ের জন্য মাথার সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়।
চিকিৎসা: বেলস পলসি রোগের লক্ষণসমূহ দেখা দিলে অবশ্যই নিকটস্থ নিউরোলজি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া উচিত। চিকিৎসা ব্যবস্থায় কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়, যা মুখের স্নায়ুর চারপাশের ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। বেলস পলসি ভাইরাসের কারণে হতে পারে, তাই ভেলসাইক্লোভিরের মতো ওষুধ ব্যবহার করা হয়। চোখ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করতে পারার কারণে চোখের পৃষ্ঠে আর্দ্রতা ঠিক রাখতে লুব্রিকেটিং ড্রপ বা চোখের মলম দেয়া হয় এবং ঘুমানোর সময় চোখের ওপর প্যাড পরতে হয়। ফেসিয়াল পলসি স্ট্রোক বা জিবিএসের কারণে হলে চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। টিউমারের কারণে হলে টিউমার অপারেশন করতে হয়। সপ্তম স্নায়ুর ওপর চাপ কমানোর জন্য ডিক¤েপ্রশন সার্জারি করানো হয়।
প্রতিরোধে করণীয়:
বেলস পলসি প্রতিরোধের কোনো উপায় জানা নেই, কিন্তু ফেসিয়াল পলসির অন্যান্য যেমন লাইম রোগ, সারকোইডোসিস, স্ট্রোক, টিউমার ইত্যাদি প্রতিরোধে নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
https://www.kaabait.com