
মেহেদী হাসান লিপন , মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) সংবাদদাতা : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রলংকারি ঘূর্ণিঝড় রেমালের জলোচ্ছাসে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পানীয়জলের আধার সকল পুকুর ডুবে গেছে। এতে করে এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ সুপেয় ও ব্যবহারের উপযোগী পানি পাচ্ছে না।
পৌরসভাসহ ও ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা। ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপজেলার সকল জলাধার সহ সব পুকুরে জলোচ্ছ্বাসের কারনে প্রবেশ করেছে সমুদ্রের লবন পানি। গাছপালা, পাতা, হাস-মুরগীর মৃতদেহ, ড্রেন ও সেপটিক ট্যাংকের ময়লা আবর্জনা। এসব কারনে উপজেলার সরকারি বেসরকারি সকল পুকুরের পানি পঁচে রং কালচে হয়ে গেছে। গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় উপজেলার ৪ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিরাপদ খাবার পানি ও ব্যবহারের পানির চরম সংকটে পড়েছেন। পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত ১ হাজার ২ শত ৮৭টি পুকুর সংরক্ষিত ছিলো। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০টি পুকুরের পানি পঁচে গেছে। ওই পুকুরগুলো থেকে দ্রুত পঁচা, দূষিত পানি অপসারণ না করলে মাটিও দূষিত হয়ে যাবে। দুর্ভোগ আরও বাড়বে। খাবার পানির জন্য মোরেলগঞ্জে প্রায় ৮ হাজার পরিবারে সরকারি বেসরকাবিভাবে পাওয়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাংকি থাকলেও ওই পরিবারগুলোর অন্যান্য কাজের জন্য নিরপদ পানির কোন উৎস্য অবশিষ্ট নেই বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে। জলোচ্ছ্বাসের সময় অধিকাংশ বাড়ির পানির ট্যাংকি ভেসে গেছে। বারইখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, বারইখালী ইউনিয়নে জলোচ্ছাসে ১০/১২ টি মিষ্টি পানির পুকুর ডবে গিয়ে ময়লা, দূগন্ধ, পানি পান করার উপযোগী নয়। এমনকি রান্না বান্নাও করা সম্ভব নয়। পুুকুরগুলোর পানি সেচ দিয়ে পানি ফেলে দিলে বৃষ্টির পানি পাওয়া সম্ভব হবে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মেম্বার জাহিদুর ইসলাম লিটন বলেন, ঘূর্ণিঝর রেমালের পর আমাদের গ্রামে সুপেয় পানি পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে দাড়িয়েছে। পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি পুকুরে ভাসছে বিভিন্ন প্রাণীর মরদেহ। বোতলের পানি ক্রয় করে খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, রেমালের জলোচ্ছাসে প্রায় শতভাগ পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। আড়াই লাখ মানুষ এখন খাবার ও ব্যবহারের নিরপদ পানি পাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ৫০ হাজার ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১ লাখ ট্যাবলেট শীঘ্রই পাওয়া যাবে। তবে, এভাবে আড়াই লাখ মানুষের নিরাপদ পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলেও কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
বেসরকারি সংস্থা ডরপ কর্মকর্তা শওকত চৌধুরী বলেন, মোরেরগঞ্জে এ সংস্থা ২০১৭ সাল থেকে পানি স্যানিটেশন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সোলার পিএসএফের মাধ্যমে খাওয়ার পানির সংকট দূর করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও হেলভেটাসের প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর প্রতিভা বিকাশ সরকার জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর, খাউলিয়া, নিশানবাড়িয়া, বারইখালী, জিউধরা ও বহরবুনিয়া ইউনিয়ন কাজ করেছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে জেন্ডারবান্ধব ও সংবেদনশীল খ্যাত ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ রাখার জন্য ওয়ার্ড সভা, বাজেট সভা, গণশুনানি, কর ও সেবা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সুপেয় পানি ব্যবহারে ভূ-তলদেশ থেকে পানি উত্তোলন না করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা ইতিমধ্যে একনেকে পাস হয়েছে। উপকূলীয় ১০টি জেলায় ২২২টি ইউনিয়নে ১ লাখ আর ডব্লিউ এইচ পানির ট্যাংক সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, এই উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে নিরাপদ পানি ব্যবহারের জন্য সরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি করে জলাধার স্থাপন করতে পারলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে উপকূলীয় বাসিন্দারা।উপজেলা কৃষি
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শর্মী রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের পরে হাসপাতালে টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও চর্মরোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।