
মেজবাহ ফাহাদ,মোরেলগঞ্জ: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত গ্রামীন অবকাঠামো। ১০ ফুট জ্বলোচ্ছাসে কার্পেটিং, কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙ্গে চৌচির বড় বড় খানাখন্দে পরিনত। ভেঙ্গে যাওয়া পাকা রাস্তার একাধীক স্থানে চলাচলে স্থানীয়দের স্বেচ্ছা শ্রম ও অর্থায়নে দেয়া হচ্ছে সাকো। কাঠের ও আয়রণ পুল ভাষিয়ে নিয়েছে জলের স্রোতে। এ উপকুলীয় অঞ্চলের ৪ লাখ মানুষের এখন যোগযোগ ব্যবস্থায় অভবনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে ১৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লীষ্ট এলজিইডি দপ্তর জানিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি ত্রাণ নয় চাই রাস্তাঘাট ও টেকসই বেড়িবাঁধ।

সরেজমিনে ও সংশ্লীষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, দু’দিনের ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ও জ্বলোচ্ছাসে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ ১টি পৌরসভায় প্রত্যন্ত গ্রামের কার্পেটিং ও কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে ভাসিয়ে নিয়িছে। ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নদীর তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বারইখালী ফেরীঘাট থেকে বহরবুনিয়া অভিমূখী ১০ কিলোমিটারের কার্পেটিং, এসবিবি ও কাঁচা রাস্তাটি ৮০ ভাগ ভেঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন স্পটের ১৫/২০টি স্থানে অনেক যায়গা জুড়ে বড় বড় খানা খন্দে পরিনত হয়েছে। রাস্তার ইট ভাসিয়ে নিয়েছে নদীতে। এতে বারইখালী, সুতালড়ী, কাশ্মির তুলাতলা, বহরবুনিয়া, ফুলহাতা ও ঘষিয়াখালীসহ ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলে দূভোর্গ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের সহযোগীতায় বড় বড় খানাগুলোতে বাঁশ ও শুপারী গাছ দিয়ে সাকো তৈরি করে চলাচল করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। এ রাস্তা থেকে চলাচলে ভুক্তভোগী বারইখালী গ্রামের মশিউর খান, আরমান শেখ, শাহিন হাওলাদার, মো. বাবলা শেখ, আনছার আলি, দোলোয়ার হোসেন, আসলাম শেখ, পল্লী চিকিৎসক আজিজুল ইসলাম ও শেফালী বেগমসহ একাধীকরা বলেন, বন্যা হয়ে গেছে ৫দিন গুরুত্বপূর্ন এ রাস্তাটি ১৫/২০ যায়গা থেকে ভেঙ্গে মানুষের চলাচলে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা রাস্তা পাড় হতে দূভোর্গের আর সীমা নেই। আমরা ত্রাণ চাইনা, চাই রাস্তাঘাট ও টেকসই বেড়িবাঁধ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের প্রতি আমাদের জোর দাবি।

অনুরুপ হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের পাঠামারা, বদনীভাঙ্গা ও সানকীভাংগা গ্রামের কাঁচা-পাকা ৮/১০টি রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। খাউলিয়া ইউনিয়নের খাউলিয়া, চালিতাবুনিয়া, সন্যাসী, পশুরবুনিয়া, ফাঁসিয়াতলা ও পূর্ব বরিশাল গ্রামের ৬/৭টি ইটসোলিং ও কাঁচা রাস্তা ও খাউলিয়া বাজার সংলগ্ন বড় কাঠের পুলটি ভেঙ্গে গিয়ে দূভোর্গে ওই এলাকার মানুষ। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কাঠালতলা-গাবতলা কার্পেটিং সংযোগ সড়কটি একাংশ ভেঙ্গে গিয়ে বড় খাদে পরিনত হয়েছে। বলইবুনিয়ার শ্রেণিখালীর ৩,শ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে নদী গর্ভে বিলিন। পঞ্চকরনের দেবরাজে ৮,শ মিটার ওয়াবদা বেড়িবাঁধ বিভিন্ন স্থান থেকে ভেঙ্গে পড়েছে।
উপজেলার যাদের একমাত্র আয়ের উৎস মৎস ঘের তাদের সেই ঘেরের চিহ্ন পর্যন্ত নেই,পথে বসে গেছে ঘের ব্যাবসায়ীরা।
এছাড়াও চিংড়াখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া ও হোগলাবুনিয়ার ৭/৮টি ব্রীজের (এ্যাপ্রোজ) সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে। ১২টি কাঠের পুল ও আয়রণ ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে। ৪/৫টি কাঠের পুল পানির স্রোতে ভাসিয়ে নিয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি দপ্তরের তথ্যমতে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২০ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা, ২৭০ কিলোমিটার এসবিবি পাকা রাস্তা, ৭/৮টি ব্রীজের এ্যাপ্রোজ, ১২টি পুল ও আয়রণ ব্রীজ বিধস্ত হয়ে ১৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, রিমালের আঘাতে এবারে গ্রামীন অবকাঠামো রাস্তা ঘাট ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রথমিক তথ্য বিবরনী তাদের সেন্টার সফটাওয়ারে এ্যাসেসমেন্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ছোটখাটো আকারে আকারে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তাগুলো মেবাইল মেইনটেনেন্স এমারজেন্সি কর্মীদের মাধ্যমে শীগ্রই মেরামত করে জনচলাচল সুগাম করা হবে। বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলোতে কাজ করতে সময় লাগবে। এ দূযোর্গে উপজেলার গ্রমীন অবকাঠামো ভেঙ্গে গিয়ে প্রায় ১৪০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে এ কর্মকর্তা জানান।
এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস,এম তারেক সুলতান বলেন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন পর্যায়ের রাস্তা ঘাটগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে জনচলাচল উপযোগী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক মহদয়ের দপ্তরে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটি তথ্য বিবরণী প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের এলজিইডি দপ্তরের উর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করারও কথা রয়েছে।