মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা তৈরি করছে। পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালনে হুইলিং চার্জ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হবে। খুব শিগগিরই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে পাঠানো হবে। বর্তমানে দেশে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি রযেছে। সেগুলো হলো তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি (টিজিটিডিসি), বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (বিজিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল), পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল), কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে এককভাবে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা গত ৬ জানুয়ারি শিল্পে বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্পকারখানার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ওই প্রস্তাবে শিল্পে বয়লার ও জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আইনগতভাবে পেট্রোবাংলার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ না থাকায় লাইসেন্সধারী কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে। যে কারণে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের পর বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব চেয়েছে বিইআরসি। গত ৭ জানুয়ারি ইস্যু করা পত্রে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে ট্যারিফ পরিবর্তনের প্রস্তাব কমিশনে দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকরা বর্তমানে অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। একক চুলা ৫৫ ঘনমিটারের বিল ও দুই চুলা ৬০ ঘনমিটারের বিল আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ ঘনমিটার পর্যন্ত গ্যাস ব্যবহারের রেকর্ড পাওয়া গেছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও নন-মিটার গ্রাহকের ব্যবহারের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক অনেকটা মিতব্যয়ী। বিইআরসি সর্বশেষ বিগত ২০২২ সালের ৫ জুন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছিলো। তবে এর আগে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩ দশমিক ৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭ দশমিক ৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়। বিইআরসির সর্বশেষ আদেশের প্রায় ১০ মাস পর তিতাস গ্যাসসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যমান এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৭৬ দশমিক ৬৫ ঘনমিটার, দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮ দশমিক ৪৪ ঘনমিটার করার আবেদন দিয়েছে। আর পরিমাণ বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দামও বেড়ে যাবে। ওই সময় তিতাসের আবেদনে বলা হয়, মিটারবিহীন কমবেশি ২৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে কোনো সমীক্ষা বা তথ্য বিশেষণ না করেই ঘনমিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এতে কারিগরি ক্ষতি বেড়েছে এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তিতাস আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো শিল্প ও ক্যাপটিভে অস্বাভাবিক হারে দাম বৃদ্ধির বিপক্ষে। কারণ শিল্পে ও ক্যাপটিভে যে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তা অযৌক্তিক। গণশুনানিতে শিল্পে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব খারিজ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের বিদ্যমান হুইলিং চার্জ রয়েছে ২৪ পয়সা। তাতে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হচ্ছে। সেজন্য ৩২ অথবা ৩৪ পয়সা বিতরণ চার্জ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হতে পারে। তিতাস গ্যাসও বর্তমানের ২১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৪ পয়সা প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। অন্য কোম্পানিগুলোও একই হারে বিতরণ চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
এদিকে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫ দশমিক ৭০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাঙ্ ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫ দশমিক ৭২ টাকা। ফলে ওই খাত টিকিয়ে রাখতে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি হবে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা অবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে শিল্পায়ণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পেট্রোবাংলার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাইয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর গণশুনানি নিয়ে আদেশ দেয়া হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, এখনো প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। মিটারবিহীন গ্রাহক যারা, তাদের ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়েও বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে মিটারবিহীন গ্রাহকরা। পেট্রোবাংলা গ্যাসের পরিমাণ ও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করবে। তাছাড়া সঞ্চালনে হুইলিং চার্জ বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হবে। তাছাড়া নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবও থাকছে।
https://www.kaabait.com