• শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫২

মার্করাম দল নিয়ে গর্বিত হারের যন্ত্রণা থাকলেও

প্রতিনিধি: / ১১৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

স্পোর্টস: শেষের আগের বলে যখন আউট হলেন কাগিসো রাবাদা, ম্যাচের ভাগ্যও চুড়ান্ত হয়ে গেল, ভারতের ডাগআউটে বয়ে গেল উচ্ছ¡াসের বান। ঠিক ভিন্ন চিত্র দক্ষিণ আফ্রিকার। এইডেন মার্করামের বিষন্ন চাহনি, কুইন্টন ডি ককের চোখে-মখে ঘোর অমানিশা আর পিন-পতন নীরবতা ড্রেসিং রুম জুড়ে। এত কাছে গিয়েও জিততে না পারার বেদনার ছাপ স্পষ্ট প্রোটিয়াদের মাঝে। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেন মার্করাম। তবে স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি সংবরণ করতে পারলেন না ডেভিড মিলার। ভারতের শিরোপা উৎসবের পাশে বাকিরা যেন খুব কষ্টে ধরে রাখলেন নিজেদের। তবে মনের ভেতরে যে বইছে তুফান, তা অনুমান করে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে মার্করামের কন্ঠেও ফুটে উঠল হৃদয়ের সেই উথালপাথাল ঝড়। দলকে নিয়ে গর্বের কথা বলতেও অবশ্য ভুললেন না প্রোটিয়া অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে টানা সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করে ফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রæপ পর্বের পর সুপার এইটেও তারা জেতে একের পর এক জমে ওঠা ম্যাচ। চাপের মুহূর্তে ভেঙে পড়া আর শেষ সময়ে খেই হারানোর যে ঐতিহাসিক দুর্নাম তাদের সঙ্গী, সেটি কাটিয়ে ওঠার বার্তাই যেন ছিল ওই সাত ম্যাচে। পরে সেমি-ফাইনালে প্রোটিয়া পেসের আগুনে ছারখার আফগানিস্তান। সহজ জয়ে প্রথম কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লেখায় মার্করামের দল। তবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতেই ফিরে আসে তাদের চিরায়ত চরিত্র। আরও একটু পোক্ত হয়ে গায়ের সঙ্গে এঁটে যায় ‘চোকার্স’ তকমা। কেনসিংটন ওভালের ফাইনালে ভারতকে ১৭৬ রানে থামানোর পর হাইনরিখ ক্লসেনের ঝড়ে জয়ের খুব কাছে চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ উইকেট বাকি রেখে ৩০ বলে তাদের করতে হতো ৩০ রান। সেখান থেকে শেষ ৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২ রান নিতে পারে তারা। ৭ রানের পরাজয়ে বেদনায় নীল হয় প্রোটিয়ারা। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মার্করামের কথায় মিশে থাকল আক্ষেপ-হতাশার নানা রঙ। “সত্যি বলতে, (বেদনার অনুভ‚তি) আমি বলে বোঝাতে পারব না। এটি কঠিন। অসাধারণ ছেলেদের নিয়ে গড়া এই দল। আমার মতে, তাদের সত্যিই ভালো কিছু প্রাপ্য। এই টুর্নামেন্টে আসার আগে আমার সত্যিই খুব ভালো একটা অনুভ‚তি হচ্ছিল। সময় যতটা এগিয়েছে, সেই অনুভ‚তি আরও পোক্ত হয়েছে। তাই এখন এটি মেনে নেওয়া বেশ কঠিন।” “তবে খেলাধুলার ব্যাপারটিই এমন। কেউ জেতে, কেউ হারে। আমরা ভবিষ্যতের টুর্নামেন্টগুলোয় জ¦লে উঠতে চেষ্টা করব।” ট্রফির ছোঁয়া না পেলেও ফাইনালে উঠেই দক্ষিণ আফ্রিক্রার ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে মার্করাম ও তার দলের নাম। যদিও সেমি-ফাইনাল জিতে মার্করাম, তাব্রেইজ শামসিরা বলেছিলেন, শিরোপা জিতেই তুষ্ট হতে চান তারা। সম্ভাবনা জাগিয়েও সেটি করতে পারেনি প্রোটিয়ারা। তবু গর্বের জায়গা এখনও যে আছে, সেটি মনে করিয়ে দিলেন অধিনায়ক মার্করাম। “প্রথমবার ফাইনাল খেলা, কয়েক দিন আগে যেমন বললাম, অবশ্যই এটি গর্ব করার মতো। তবে আমাদের চোখে এটি যথেষ্ট নয়। শুধু ফাইনালে উঠেই সন্তুষ্ট হতে হওয়া যায় না। তবু আমি মনে করি, কিছুটা সময় নিয়ে আমরা ভালো জিনিসগুলো পর্যালোচনা করব। তবে অবশ্যই, এই মুহূর্তে এটা বেশ কষ্ট দিচ্ছে।” ম্যাচে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাওয়ার প্লের মধ্যে মাত্র ৩৪ রানে তারা নেয় ভারতের ৩ উইকেট। সেখান থেকে ভিরাট কোহলি ও আকসার প্যাটেল মিলে সামাল দেন প্রাথমিক চাপ। ৩১ বলে ৪৭ রান করা আকসারের বিদায়ের পর শিভাম দুবের সঙ্গে রানের গতি বাড়ান কোহলি। আগের ম্যাচগুলোর টানা ব্যর্থতায় ডুবতে থাকা কোহলি ফাইনালে খেলেন ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। পাশাপাশি দুবের ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিওতে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়ে ভারত। লক্ষ্যের পেছনে ছুটে শুরু থেকেই রানের চাহিদা মিটিয়ে খেলতে থাকে প্রোটিয়ারা। দশ ওভার শেষে ৮১ রান করার পর ৫ ওভারে আরও ৬৬ রান নিয়ে ম্যাচ প্রায় পকেটেই পুরে ফেলে তারা। সেখান থেকেই তালগোল পাকিয়ে শেষ পর্যন্ত আর জেতা হয়নি তাদের। আরও একবার তারা ‘চোক’ করেছেন, এমন কথা বললে প্রতিবাদ করার বেশি কিছু হয়তো পাবেন না তারা। তবে ম্যাচ শেষে হারের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজলেন না মার্করাম। “(ম্যাচ হারের পেছনে) নির্দিষ্ট কোনো মুহূর্ত নয়। ৪০ ওভারের পুরোটা ম্যাচ। আপনি যদি দেখেন, কয়েকটা মুহূর্ত ছিল যেখানে আমরা হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম। তবে সব মিলিয়ে এই ফাইনালে দলের পারফরম্যান্সে আমি গর্বিত। এত কাছাকাছি যাওয়া নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি।” “৩০ বলে ৩০ রান লাগে, এই অবস্থা থেকে হেরে যাওয়া প্রথম ম্যাচ নয় এটি। ভারতকে ভালো বোলিং-ফিল্ডিং করতে দিয়ে, ওই অবস্থা থেকে শক্ত অবস্থায় যেতে দিয়েছি আমরা। এই খেলায় মাঝেমধ্যে এমন হয়। যেটা বললাম, এখন কোনো কিছু আলাদা করা কঠিন।” ফাইনাল হারের হতাশা ভুলে সামনের দিকে তাকানোর বার্তাও দিয়ে রাখলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। “আগামী কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহে আমরা পেছন ফিরে তাকাব এবং এই ম্যাচে কোথায় আরও উন্নতি করতে পারতাম, সেটি খুঁজব। তবে অবশ্যই ভালো জিনিসগুলোই বেশি আলোচনা করব।”


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com