• বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:১১

মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজন সতর্কতা

প্রতিনিধি: / ৫৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

স্বাস্থ্য: মাঙ্কিপক্স বিরল ও স্বল্পপরিচিত একটি রোগ। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় গত কয়েক বছরের মত এবারও তা ছড়িয়েছে। আর এক কঙ্গোতেই এবছর এ পর্যন্ত ৫৩৭ জন মারা গিয়েছে। করোনা মহামারির মতোই বিশ্বজুড়ে এই নতুন ভাইরাস নিয়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও। বাংলাদেশও এই উদ্বেগের বাইরে নয়, কারণ যেসব দেশে ইতোমধ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ দেখা গেছে, সেসব দেশ থেকে প্রায় প্রতিদিন লোকজন আসছেন। এজন্য মাঙ্কিপক্স নিয়ে ঢাকাসহ দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে যত দ্রæত সম্ভব সরকারের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া এমপক্সের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অত্যন্ত সংক্রামক এই এমপক্স রোগ আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল। আফ্রিকার যেই ১১টা দেশে এটি ছড়িয়েছে তার মধ্যে ৪টি নতুন দেশ যুক্ত হয়েছে, যেখানে এটি আগে ছিল না। রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, উগান্ডা ও কেনিয়ায় এটি আগে ছিল না। এ রোগের একটি নতুন ধরন যেভাবে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে, সেই বিষয়ে এবং এর উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। এ রোগের উপসর্গ ফ্লুর মতো। এতে ত্বকের ক্ষত তৈরি হয় এবং তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে মারা যেতে পারেন চারজন। এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন- ক্লেড ১ ও ক্লেড ২। ইতঃপূর্বে ২০২২ সালে এমপক্স নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্লেড ২ ধরনের তুলনামূলক মৃদু সংক্রমণে জারি করা হয়েছিল এ জরুরি অবস্থা। তবে এখন আরও বেশি প্রাণঘাতী ক্লেড ১এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ইতঃপূর্বে এ ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এখন মৃত্যুহারও বাড়ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে এমপক্সের ভাইরাসের রূপবদল হয়। এই রূপান্তরে তৈরি হওয়া নতুন ধরনের নাম ক্লেড ১বি। তখন থেকে এটি দ্রæত ছড়াচ্ছে। এটিকে একজন বিজ্ঞানী ‘এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে এমপক্সের ১৫ হাজার ৭০০এর বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
> ছড়াচ্ছে কীভাবে
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ¦র, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। জ¦র কমলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।
হাঁচি, কাশি, যৌন সম্পর্ক, সংস্পর্শ ও কাপড় জামার সংস্পর্শে এটি ছড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাঙ্কিপক্স বিশেষজ্ঞ লুইস বলেছেন, আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৯৯ জন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জন শুধু পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমকামী ও উভকামী পুরুষদের সতর্ক হতে বলেছে। লুইসের কথাই শেষ কথা নয়। সমকামী ও উভকামী কম বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে মাঙ্কিপক্স কেন বেশি পাওয়া যাচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কার মাধ্যমে কীভাবে ছড়াচ্ছে, এ বিষয়ে চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়। বরং সংক্রমণের ঘটনাগুলো সম্পর্কিত নয় মনে হচ্ছে। হতে পারে সমকামীরা নিজেদের যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অন্যান্যের থেকে বেশি সচেতন, তাই তাঁরাই চিকিৎসকের কাছে আসছেন। এই রোগ অন্য আরও অনেকভাবে ছড়াতে পারে, ছড়াচ্ছে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত মানুষের তোয়ালে ব্যবহার করে দুটি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে স¤প্রতি সংক্রমণের যেসব ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর একটির সঙ্গে অপরটির কোনো যোগসূত্র এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংক্রমণ ঘটেছে যুক্তরাজ্যের ভেতরই। সেখানে একজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি মাঙ্কিপক্স রোগীকে সেবা দিয়েছিলেন। প্রমাণসহ পরিষ্কার যোগসূত্র নিশ্চিত না হয়ে এটা শুধুই সমকামীদের সমস্যা বলে প্রচার চালালে মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে অভিযান সফল না-ও হতে পারে। সমকামী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে মানুষ রোগটি লুকাবে।
> মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের লক্ষণ কী কী?
একবার কোন ব্যাক্তি এ রোগে সংক্রমিত হলে তার ৪ দিন পরে লক্ষণগুলি বিকাশ শুরু হয়।
ফুসকুড়ি, প্রধানত মুখে, বুকে হাতে পায়ে ও শরীরের অন্যান্য অংশে- সেই সাথে
কাঁপুনি দিয়ে জ¦র
বমি বমি ভাব বমি
নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
মাথা যন্ত্রণা,
শরীরের মাংশ পেশিতে ব্যথা,
শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি (লিম্ফনোড) ফুলে ওঠে
স্কিন বাম্প হওয়া বা ফোলা
তরল ভরা পাস্টুলস
স্কিনে প্যাপিউলস বা ফোস্কা হওয়া
ধীরে ধীরে সেই ক্ষত আরও গভীর হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গুটি বা জলবসন্তের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গে মিল আছে বলে অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগকে বসন্ত বা চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন।
> চিকেন পক্স ও মাঙ্কিপক্সের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
মাঙ্কিপক্সকে অনেকেই চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন। চিকেন পক্সের মতো মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রেও শরীরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে। চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে শরীরে লালচে রঙের ঘামাচি বা র্যাশের মতো গুটি গুটি বের হবে। মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। শরীরে ব্যথা, কাপুনি দিয়ে জ¦র ইত্যাদি লক্ষণে চিকেন পক্সের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের মিল আছে। চিকেন পক্সের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার ৫-৭ দিনের মধ্যে শরীরে ফুসকুঁড়ির সৃষ্টি করে। সেটা ধীরে ধীরে জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। ৭-১০ দিন পর থেকে তা শুকোতে থাকে। অন্যদিকে মাঙ্কিপক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৫-২১ দিন পর্যন্ত হতে পারে। জ¦র দেখা দেওয়ার ১-৩ দিনের মধ্যে (কখনো কখনো আরও বেশি) রোগীর একটি ফুসকুড়ি তৈরি হয়। যা প্রায়শই মুখে শুরু হয়, তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে তা সারতে ২-৪ সপ্তাহ লাগতে পারে। তরলযুক্ত এই ফুসকুড়িগুলো পরে ত্বকের দাগেরও সৃষ্টি করছে। উপসর্গগত সাদৃশ্য থাকলেও চিকেন পক্স ও মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, মাঙ্কিপক্সের কারণে লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় (লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি)। তবে গুটিবসন্ত বা চিকেন পক্স হলে আবার এ সমস্যা হয় না। লিম্ফনোড হলো একটি ডিম্বাশয় বা কিডনি আকৃতির অঙ্গ। এটি লসিকাতন্ত্রের ও অভিযোজিত রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার একটি অঙ্গ। লিম্ফনোডগুলো সারা শরীর জুড়ে বিস্তৃতভাবে উপস্থিত থাকে। মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শরীরে ঢুকলে লিম্ফনোডগুলো ফুলে ওঠে। এলোপ্যাথিতে চিকেন পক্সের ও অন্যান্য ভাইরাস জ¦রের প্রতিকার লক্ষণ ভিক্তিক। এই বিরল রোগ নিরাময়ের এখনো পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আফ্রিকায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
> হোমিও মেডিসিনঃ-লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রাথমিক ভাবে যেইসব মেডিসিন মাঙ্কিপক্সের জন্য আসতে পারে রাসটক্স, সারসেনিয়া পুরপুরিয়া, বাইয়োনিয়া
ভ্যাকসিনাম, ম্যাল্যান্ডরিনাম, পালসেটিলা, এন্টিম ক্রুড, সালফার, থুজা, ভেরিওলিনাম, মারকুরিয়াস সল, সাইলিসিয়া ইত্যাদি। পরিশেষে, মাঙ্কিপক্সের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে যেকোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মতই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়।এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকাও নেই। তবে গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর মিল রয়েছে। ফলে গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। যেহেতু এ রোগ এখনও সাধারণভাবে প্রাণঘাতী নয়, তাই এটি নিয়ে উদ্বেগের তেমন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com