ধর্মপাতা: প্রতিদিন সকালে বা নির্দিষ্ট সময়ে চাকুরেরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বের হয়। ছাত্ররা স্কুল-মাদরাসায় যায়। সময় হয়ে এলে আর কেউ ঘুমিয়ে থাকে না। গৃহকর্তা বা কর্ত্রী সকলকে জাগরিত করে থাকে, কাউকে ধমকও দিয়ে থাকে। কিন্তু নামাজের যখন সময় হয়, মুয়াজ্জিন যখন আহবান করে বিশেষ করে ফজরের নামাজের জন্য ডাকে তখন খুব কম লোকই নিজ ঘর হতে বের হয়ে থাকে। খুব অল্প গৃহকর্তা-কর্ত্রীই নিজেদের পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে থাকে বা ধমক দিয়ে থাকে। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, বে-নামাজীর যাবতীয় অভিশাপ, কুপরিণতি, শাস্তি ও ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে ঘরকুনো না থেকে জামায়াতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে সময়মত ৫ওয়াক্ত নামাজ স্ব-পরিবারে আদায় করার সুপরিকল্পনা ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত অবলম্বন করা। নামাজ ছেড়ে দিলেই সে কুফরীর সীমানায় চলে যায়, সে আর ঈমানের গন্ডির মধ্যে থাকে না। সাহাবীগণও নামাজ ছেড়ে দেয়াকে প্রকাশ্য কুফরী মনে করতেন। পরিনামে জাহান্নাম অবধারিত, আল্ল¬াহকে যথাযথভাবে ভয়করা, ৭০গুন শক্তি সম্পন্ন কালো জাহান্নামের আগুনকে ভয়করা, সেদিন জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলবে আমরা নামাজী ছিলাম না। গুনয়ািতুত্বলিবীনে বে-নামাজীদের জানাজা পড়া ও মুসলিমদের ক্ববরস্থানে দাফন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইচ্ছাকৃতভাভেবে নামাজ তরককারী অথবা নামাজের ফরজিয়াতকে অস্বীকারকারী বক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হতে বহিস্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে নামাজ তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে নামাজ আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফযত করে না, সে ব্যক্তি সম্পর্কে শরী’আতের বিধান খুব ভয়াবহ। জান্নাতীরা সাক্বার (জাহান্নাম) এ নিক্ষিপ্ত অপরাধীদেরকে জিজ্ঞেস করবে, কিসে তোমাদেরকে এ ভয়াবহ শাস্তিতে গ্রেপ্তার করেছে? তারা বলবে, আমরা বেনামাজী ছিলাম অর্থ্যাৎ নামাজী ছিলাম না (মুদ্দাস্সীর ৪৩-৪৪)। আল্লাহ বলেন, অতঃপর দুর্ভোগ ঐ সব নামাজীর জন্য’ ‘যারা তাদের নামাজ থেকে উদাসীন’। ‘’যারা তা লোকদেখানোর জন্য আদায় করে (মাঊন ৪-৬)। অলস ও লোক দেখানো নামাজীদের আল্ল¬াহ মুনাফিক্ব ও প্রতারক বলেছেন। রসূল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ হেফাযত করল নাÑ সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন ক্বারূণ, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খলেফর সঙ্গে থাকবে’। কেয়ামতের দিন কাফের নেতাদের সাথে হাশর হওয়ার অর্থই হল জাহান্নামবাসী হওয়া। যদিও সে দুনিয়াতে একজন নামাজী ছিল। অতএব শুধু নামাজ তরক করা নয় বরং নামাজের হেফাযত বা রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় না হলেও জাহান্নামী হতে হবে। নামাজ তরক করাকে হাদীসে কুফরী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম একে ‘কুফরী’ হিসেবে গণ্য করতেন। তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামী। তবে ব্যক্তিগত জীবনে যদি খালেছ অন্তরে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয় এবং ইসলামের হালাল-হারাম ও ফরজ-ওয়াজিব সমূহের অস্বীহারকারী না হয় এবং শিরক না করে, তাহলে তারা কালিমায়ে শাহাদাতকে অস্বীকারকারী কাফেরের ন্যায় ইসলাম থেকে খারিজ নয় বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কেননা এই প্রকারের মুসলিমরা কর্মগতভাবে কাফের হলেও বিশ্বাসগতভাবে কাফের নয়। বরং খালেছ অন্তরে পাঠ করা কালেমার তরকতে এবং কবীরা গোনাহগারদের জন্য শেষনবী মুহাম্মাদ (স.)-এর শাফা’আতের ফলে শেষ পর্যায়ে এক সময় তারা জান্নাতে ফিরে আসবে। তবে তারা সেখানে ‘জাহান্নামী’ বলেই অভিহিত হবে। যেটা হবে বড়ই লজ্জাকর বিষয়। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে আহলেসুন্নাত বিদ্বানগণের মধ্যে ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ, এবং প্রাথমিক ও পরবর্তী যুগের প্রায় সকল বিদ্বান এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, ঐ ব্যক্তি ‘ফাসিক্ব’ এবং তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে তওবা করে নামাজ আদায় শুরু না করে, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ রাখতে হবে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেন, ঐ ব্যক্তিকে নামাজের জন্য ডাকার পরেও যদি সে ইনকার করে ও বলে যে ‘আমি নামাজ আদায় করব না’ এবং এইভাবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় তখন তাকে কঠোর শাস্তি ওয়াজিব। অবশ্যই এরূপ শাস্তিদানের দায়িত্ব হ’ল ইসলামী সরকারের। ঐ ব্যক্তির জানাজা মসজিদের ইমাম বা বড় কোন বুযুর্গ আলেম দিয়ে পড়ানো যাবে না। কেননা রসূল (স.) গণীমতের মালের (আনুমানিক দুই দিরহাম মূল্যের) তুচ্ছ বস্তুর খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীরর জানাজা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন। (আবূদাউদ,ইবনু মাজাহ) এক্ষণে আল্লাহকৃত ফরজ সালাতের সঙ্গে খেয়ানতকারী ব্যক্তির সাথে মুমিন সমাজের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সহজেই অনুমেয়।
মুমিন মুসলমানের পক্ষে কিছুেতেই স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে নামাজ ছেড়ে দেয়া সম্ভব নয়। সাহাবী, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহেদীন, সালফে সালেহীন এবং মুসলমানের স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে নামাজ ছেড়ে দেয়ার কোন ইতিহাস কোথাও নেই। সুতরাং সমস্ত খোঁড়া অজুহাত বর্জন করে মসজিদে জামায়াতে নামাজে আসতে অভ্যস্ত হন। (সংকলিত)
https://www.kaabait.com