• সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৫

বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জাবিতে

প্রতিনিধি: / ১৮৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার জেরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাবি প্রশাসন। গত রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অছাত্র ও পোষ্যদের আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়ার বডির সদস্যদের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে, মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহ পরানের সনদ স্থগিত এবং মো. মুরাদ হোসেন, সাগর সিদ্দিকী, সাব্বির হাসান সাগর ও হাসানুজ্জামানের সনদ স্থগিত এবং সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা অধিকতর তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন ওই নারীর স্বামী। তার প্রেক্ষিতে মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৩১৭ নম্বর কক্ষে নির্যাতন চালাতেন অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর: এদিকে ঘটনায় নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন ধর্ষণে অভিযুক্ত জাবি ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান। অভিযোগকারীরা বলছেন, তার সব অপকর্মের সাক্ষী এ কক্ষটি। চাঁদা বা মুক্তিপণের দাবিতে এখানেই আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে জানা গেছে। শনিবার সন্ধ্যার পর বহিরাগত এক ব্যক্তিকে এই কক্ষেই আটকে রেখে হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে মোস্তাফিজ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নাম-পরিচয়ে অনিচ্ছুক মীর মশাররফ হোসেন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ওই কক্ষে বিভিন্ন সময় বহিরাগতদের ধরে এনে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত রুমটি তালাবদ্ধ। মাঝেমধ্যে উচ্চৈঃস্বরে গানের আওয়াজ আসত রুম থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন যুগ্মসম্পাদক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষটিকে মোস্তাফিজ ও তার সহযোগীরা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওই কক্ষে তারা নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। এ ছাড়া সিঅ্যান্ডবি, ডেইরি গেট ও হলের সামনের দোকানগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। তাদের অত্যাচারে হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দোকানদাররা অতিষ্ঠ। জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ছাত্রলীগে অপরাধী ও আদর্শচ্যুত নেতাকর্মীদের কোনো জায়গা নেই। শনিবার রাতে মোস্তাফিজ জঘন্য কাজ করেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সে অপরাধী। আমরা চাই ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। মূল অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, শনিবার সকালে আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। রাত ১টায় ক্যাম্পাসে আসি। তাই সহায়তাকারী কারও সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ হয়নি। ক্যাম্পাসে আসার পর প্রশাসন আমাকে দায়ীদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করার কথা জানায়। সেজন্য আমি হলের সবাইকে ফোন দিয়ে অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে বলেছি। ধর্ষকের কোনো দল নেই। এ ছাড়া শাহ পরানের সঙ্গে আমার কাল থেকে আজ পর্যন্ত যোগাযোগই হয়নি। হলের কক্ষ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। হলটি অনেক বড়। এর পুরো খোঁজ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোস্তাফিজ ও তার সহযোগীরা ওই রুমে থাকতেন। তাদের সব অপকর্মের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছি। হল প্রশাসন তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে। এ ছাড়া এসবের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না সে বিষয়েও আমরা খোঁজ নিচ্ছি।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com