টানা ১২ দিন বন্ধ থাকার পর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ খুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে ব্যবহারকারীরা কোনো ধরনের ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই ফেসবুকে ও হোয়াটসঅ্যাপ লগইন করতে পারছেন। এর আগে এদিন বিকেল থেকে সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা আসে। দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে ব্রিফিং করে এ ঘোষণা দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বৈঠকে টিকটকের প্রতিনিধিরা সশরীরে এবং ফেসবুক ও ইউটিউবের প্রতিনিধিরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অংশ নেন। বৈঠক শেষে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈঠক শেষে আমরা এ ব্রিফিং করছি। এটা শেষ হলেই ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে। তখন ভিপিএন ব্যবহার কমবে। ইন্টারনেটে গতিও বাড়বে। ফেসবুকের ক্যাশ সার্ভার ঠিক হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে সবাই তা ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা হোয়াটস্যাপ ওপেন করে দিচ্ছি। সবগুলোই ওপেন করে দিচ্ছি। তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চালু হবে। তিনি বলেন, ফেসবুক-ইউটিউব ও টিকটককে বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপনের অনুরোধ করেছি। আমরাও চাই এ দেশে তাদের বিনিয়োগ হোক। বাংলাদেশে অফিস ও ডেটা সেন্টার স্থাপন করলে আমরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব। এদিকে ফেসবুক বন্ধ থাকায় ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) দিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করায় ইন্টারনেট ও মোবাইল ধীরগতি হয়ে যায়। ফেসবুক খুলে দিয়ে ভিপিএন ব্যবহার বন্ধ হলে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পলক বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সম্পূর্ণ গতি বৃদ্ধি করা। এজন্য ভিপিএন ব্যবহার বন্ধ করা, স্থানীয় ক্যাশ সার্ভার চালু করাসহ ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। আগের দিন গত মঙ্গলবার চলমান সময়ের সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক জরুরি সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারনেটের গতি কম থাকা নিয়ে পলক বলেন, আমরা ইন্টারনেটে কোনো রেস্ট্রিকশন রাখিনি, কোনো বাধা রাখিনি। আমাদের টেকনিক্যাল পারসনরা বলেছেন যে, ভিপিএন ব্যবহারের ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রায় ৫ হাজার শতাংশ বেড়েছে। যারা ভিপিএন ব্যবহার করছেন তারা অন্য দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। ফলে বিদেশে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। এটা অন্যতম কারণ ইন্টারনেট ¯েøা থাকার। সহিংসতার সময় থেকে বন্ধ থাকা ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া বিকল্প উপায়ে ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। ভিপিএন ব্যবহারে সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে কি না, এক প্রশ্নে পলক বলেন, ভিপিএন ব্যবহারে সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে। ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশনগুলো আমরা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারাই ব্যবহার করি না কেন, আমাদের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছে যে ভিপিএন ব্যবহার করা মানেই হচ্ছে ডেটা ঝুঁকির মধ্যে পড়া। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছে যেন আমরা গণমাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারের সব পর্যায়ে এই বার্তা পৌঁছে দেই যে, ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার সময় ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়া ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনা দিতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান পলক। তিনি বলেন, সকালে আমি বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে একটি অনুরোধপত্র পাঠিয়েছি, যাতে ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সরদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আমরা বেসিস, ই-কমার্স উদ্যোক্তা, ফিল্যান্সারদের সাথে বসব। তাদের পরামর্শ ও প্রস্তাব আলোচনা করে আমরা পদক্ষেপ নেব।