বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও সশস্ত্র হামলার ঘটনা পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতির ওপরে ‘কোনো প্রভাব ফেলবে না’ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কেএনএফ (কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর সশস্ত্র তৎপরতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সরকার এ নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং শক্ত অবস্থান নিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই এলাকা ঘুরে এসেছেন। যৌথ অভিযান চলছে।” মঙ্গলবার রাতে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে। টাকার পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্রও লুট করে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দীন তখন রুমা উপজেলা পরিষদ এলাকায় মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ছিলেন। হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে তাকে অপহরণ করে। পরদিন দুপুরে রুমা থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে তিনটি গাড়িতে আসা একদল সশস্ত্র লোক। এ নিয়ে দুই উপজেলার মানুষের ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করে র্যাব। এর পরপরই থানচিতে পুলিশ ও সশস্ত্র লোকদের মধ্যে ঘণ্টাখানেক গোলাগুলি হয়। কেএনএফ এর বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সবই জানতেন’ মন্তব্য করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গত শনিবার তিনি বলেন, কেএনএফ’র তৎপরতাকে ‘বিচ্ছিন্ন কিংবা সাধারণ ঘটনা’ হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও ‘প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাদের বলেন, “বিএনপি ব্যর্থতা ঢাকতে ইস্যু খোঁজে। মিয়ানমার ইস্যুতে ব্যর্থ হয়ে এখন কুকি চিন ইস্যু নিয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর দ্বারা গোটা পাহাড়ের সার্বিক শান্তি পরিস্থিতিতে ইমপ্যাক্ট পড়বে না। কাজেই এটা নিয়ে নতুন ইস্যু খোঁজাও ব্যর্থ হবে। ‘রিমোট কন্ট্রোলের ডাকে সাড়া মিলবে না’: কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলনে ‘ব্যর্থ হয়ে’ শক্তি সামর্থ্য সবই ‘হারিয়ে ফেলেছে’। “নেতাকর্মীরা দলটির নেতৃত্বের উপর হতাশ। তারেকের উপর হতাশ। তাদের নেতা দেশে নেই, রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন হবে? এটা কি সম্ভব! আন্দোলন করতে হলে রাজপথে এসে করতে হবে। রিমোট কন্ট্রোলের ডাকে জনগণ সাড়া দিবে না।” বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মুক্তির’ জন্য দলের নেতাকর্মীদের ভ‚মিকার সমালোচনা করে কাদের বলেন, “খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থার জন্য বিএনপিই দায়ী। একটা রাজনৈতিক দল যারা তাকে দেশনেত্রী বলেন, তার মুক্তির জন্য মির্জা ফখরুল কি আন্দোলন করেছেন? পাঁচশ লোকের একটা মিছিলও করতে পারেননি। আইনি লড়াইয়ে আদালত উপেক্ষা করে বার বার সময়ক্ষেপণ করেছেন। “এটা না করলে বিষয়টা অনেক আগেই সেটেল হয়ে যেত। বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ। বেগম জিয়ার আইনি লড়াইয়েও ব্যর্থ। তাদের এখন চোখের পানি, কান্না, দীর্ঘশ্বাস – এগুলো সম্বল।” দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে ব্যবস্থা: উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় নিকটাত্মীয়দের মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উন্মুক্ত মানে উন্মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করার ইচ্ছা বাসনা অনেকেরই থাকতে পারে। আমাদের বক্তব্য, এমপি সাহেবরা বা মন্ত্রী মহোদয়রা কোথাও কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে।“ তিনি বলেন, “প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা যেন সফল করতে না পারে। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলায় নিকটাত্মীদের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা এগুলো জানি। তদন্ত করে খোঁজখবর নিচ্ছি। যুবলীগের কমিটি দেওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “যুবলীগের কমিটি দিতে হলে যুবলীগের অনুমোদন লাগবে। আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন আওয়ামী লীগ দেবে। কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে সেটার খেসারত দিতে হবে। সেটা যেই হোক। আওয়ামী লীগের আগাম কাউন্সিল হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ সম্মেলন করবে। এটা বিএনপি নয়। সময়মত আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে, আগাম নয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
https://www.kaabait.com