শেখ আব্দুল গফুর, কপিলমুনি (খুলনা) অফিস: পাইকগাছার হরিঢালীতে
স্বামী ও শশুরের নির্মম নির্যাতনে আবেদা বেগম (২৭) নামের এক পুত্রবধুর করুন মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ মৃতের স্বামী জাকারিয়া সরদারকে আটক করেছে।এদিকে পুত্রবধু আবেদার মৃত্যুর
খবর পেয়ে শশুর মোহাম্মদ আলী সরদার গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
শশুর ও স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধু আবেদা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে গ্রাম্য
চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়, আবেদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঊন্নত
চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। পুত্রবধূ আবেদার বাপের বাড়ি সোনাতনকাটি
গ্রামে হওয়ায় বাপের বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে আবেদাকে প্রথমে তালা হাসপাতাল ও পরে
অবস্থার অবনতি হলে সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর সেখানে তার
অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রবিবার তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে
মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পাইকগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা
হয়েছে। মামলা নং ১১, তাং ০৭/০৫/২০২৪। পুলিশ ও মৃতের পরিবার জানায়, পাইকগাছা
উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের হরিঢালী গ্রামের মোহাম্মদ আলী সরদারের বড় ছেলে
জাকারিয়া সরদার (৩০) এর সাথে একই ইউনিয়নের সোনাতনকাটী গ্রামের ফরিদ গাজীর
কন্যা আবেদা বেগম (২৭) এর বিয়ে হয়।এরপর তাদের ঘরে জন্ম নেয় আব্দুল্লা ( ৯) ও আবির
(১বছর ৬ মাস) দুটি পুত্র সন্তান। বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে আবেদা বেগমের শ্বশুর
মোহাম্মদ আলী সরদার, শাশুড়ী রাবেয়া খাতুন ও স্বামী জাকারিয়া সরদার তার উপর শারীরিক ও
মানষিক নির্যাতন চালাতো। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঘটনারদিন শনিবার দুপুর ১২
টার দিকে গরুর খাবার দিতে দেরি হওয়ায় গৃহবধূ আবেদা বেগমের স্বামী জাকারিয়া
সরদার (৩২) এর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে,ঐ সময় বাড়িতে শশুর নাড়ার গাদার উপর কাজ
করছিলেন এবং শাশুড়ী রেবেকা বেগম সাংসারিক কাজে ব্যাস্ত ছিলেন। একপর্যায়ে
স্বামী জাকারিয়া তার স্ত্রীকে মারধর শুরু করে, স্বামী যখন স্ত্রীকে পেটাচ্ছিলেন শশুর তখন
নেমে এসে পুত্রবধূর উপর শুরু করেন অমানবিক অত্যাচার। শশুর পাশে থাকা নারকেল গাছের
গামলা দিয়ে গলা ও বুক বরাবর আঘাত করাতে আবেদার লাঞ্চে আঘাত সহ গলার শ্বাসনালী
চেপে যায়, সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, স্বামী, শশুর ও শাশুড়ী দফায় দফায় তার উপর
শারীরিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে গৃহবধু আবেদা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওবাইদুর রহমান বলেন, আবেদার মৃতদেহ ময়না
তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার আসামী তার স্বামীকে আটক করা
হয়েছে, এছাড়া অন্য আসামীদের আটকের তৎপরতা চলছে। ঊল্লেখ্য প্রতিবেশী সূত্রে
জানা যায়, জাকারিয়ার প্রথম স্ত্রীর প্রতি শশুর মোহাম্মদ আলীর ছিল কুদৃষ্টি। শ্বশুরের
ক’প্রস্তাপে প্রথম বৌমা রাজি না হলে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতেন প্রতিনিয়ত,
এমনটা সইতে না পেরে প্রথম স্ত্রী ছেড়ে গিয়েছেন স্বামীকে। হত্যার স্বীকার হওয়া
নারী আবেদা জাকারিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী।
https://www.kaabait.com