বিদেশ : নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে এবং ইয়াহিয়া সিনোয়ারদের পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চান। সোমবার এক বিবৃতিতে করিম খান একথা জানান। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও রয়েছেন এই তালিকায়। ইসরায়েল ও গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন করিম খান।
হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
সোমবারের বিবৃতিতে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হানিয়েহ, গাজার প্রধান সিনোয়ার এবং হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মদ দিয়াব আল-মাসরি (যিনি দাইফ নামেও পরিচিত) এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তালিকা দেয়া হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নির্মূলচেষ্টা, হত্যা, জিম্মি করা, ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, নিষ্ঠুর আচরণ, ব্যক্তিগত মর্যাদাহানি এবং অন্য অমানবিক কর্মকাÐ। করিম খান বলেন, তার দপ্তর যুক্তিসঙ্গত কারণেই বিশ্বাস করে যে এই তিনজনই ‘শত শত বেসামরিক ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যার জন্য দায়ী’। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২০০ জন নিহত হন এবং আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
ইসরায়েলের নেতাদের বিষয়ে করিম খান বলেন, তার দপ্তরের কাছে এটা বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ট গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে (গাজা উপত্যকায়) সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে- বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখা, ইচ্ছাকৃতভাবে শরীর বা স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি বা গুরুতর আঘাত সৃষ্টি করা, ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা, ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা, নির্মূল, হত্যা, নিপীড়ন ও অন্য অমানবিক কর্মকাÐ। করিম খান বলেন, তার দলের সংগ্রহ করা প্রমাণগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য নানাকিছু থেকে পুরো গাজা উপত্যকায় বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করেছে। সোমবার হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী?
করিম খানের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গ্যান্টজ। নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের পাশাপাশি তিনিও ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য। গ্যান্টজ বলেছেন, ‘ইসরায়েল কঠোর নৈতিকতার মধ্যে থেকে লড়াই করে এবং দেশটির একটি শক্তিশালী বিচার বিভাগ রয়েছে যা নিজেদের বিষয়ে তদন্ত করতে সক্ষম। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এই আবেদন করার জন্য প্রসিকিউটরের অবস্থানই একটি ঐতিহাসিক অপরাধ, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
কৌঁসুলিকে তিনজন বিচারকের একটি বিচারপূর্ব প্যানেলের কাছে পরোয়ানা জারির অনুরোধ করতে হবে। সাক্ষ্য বিবেচনা এবং বিচার এগিয়ে যেতে পারে কিনা তা নির্ধারণ করতে এই প্যানেলের আনুমানিক দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
https://www.kaabait.com