• সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬

দেশে কিশোর-তরুণদের প্রাণঘাতী যানে পরিণত হয়েছে মোটরবাইক

প্রতিনিধি: / ১১৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

দেশে দ্রুতগতির মোটরবাইক এখন কিশোর-তরুণদের প্রাণঘাতী যানে পরিণত হয়েছে। এ যানেই সড়কে বেশি প্রাণ ঝরছে। মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পাঁচ বছরে ১০ সহস্রাধিক মানুষ মারা গেছে। যার একটা বড় অংশই কিশোর ও তরুণ। মূলত বেপরোয়া গতি, মানহীন হেলমেটের ব্যবহার, ঘনঘন লেন পরিবর্তন এবং অদক্ষ চালকের কারণে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। তাতে ঝরছে প্রাণ আর অকালে পঙ্গুত্ববরণ করছে অনেক তরুণ। এনজিও, পুলিশ এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) প্রতিদিন গড়ে ১ হাজারের বেশি রোগী ওই হাসপাতালে আসছে। এর অন্তত ৩০ শতাংশই মোটরবাইক দুর্ঘটনার শিকার। আর তাদের একটা বড় অংশ কিশোর কিংবা তরুণ। আর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মতে, রাজধানীতে মোটরবাইক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বেপরোয়া গতিতে চালানো, রাতে রেসিং করা, সিগন্যাল না মানার প্রবণতা এবং ফিটনেস না থাকা। অনেকের আবার বয়স কম, তারপরও লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা প্রয়োজন। রাজধানীতে কাগজে-কলমে আছে ৯ শতাংশের কম। ফলে নানা কারণেই এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কমানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। সূত্র জানায়, বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী পাঁচ বছরে ১০ হাজার ১৫৩টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে সারা দেশে ২ হাজার ৫৩২টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৪৮৭ এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ৯৪৩ জন। ২০২২ সালে ২ হাজার ৯৭৩টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৯১ জন মারা গেছে। এ ছাড়া ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২১৪ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৮১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৬৩ জন এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ১৮৯টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৯৪৫ জন। মোটরবাইকচালকরা সঠিক হেলমেট ব্যবহার না করায় মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস করা যাচ্ছে না। সূত্র আরো জানায়, এদেশে যারা মোটরবাইক চালান, তাদের ১০ শতাংশ ফুলফেস হেলমেট ব্যবহার করেন আর ৩৫ শতাংশ হাফফেস হেলমেট ব্যবহার করেন। কিছু হেলমেট আছে, যা প্লাস্টিকের বাটি ছাড়া আর কিছুই না। এমন হেলমেট দুর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। মূলত বেপরোয়া গতির কারণে মোটরবাইক দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। কিছু বাইকার আছেন, যারা প্রতিনিয়ত লেন পরিবর্তন করেন। যে কোনো ফাঁকফোকর পেলে তা দিয়েই এগিয়ে চলতে চান। এসব কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মোটরবাইক দুর্ঘটনায় কিশোর-তরুণদের বেশি মৃত্যুর পেছনে অভিভাবকদের অসচেতনতাকে দায়ী করে বলেন, অভিভাবকরা সন্তানদের প্রশ্রয় দিয়ে তাদের হাতে মরণযন্ত্র তুলে দিচ্ছেন। এটি পারিবারিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বিষয়। সামাজিক ও মূল্যবোধের যেমন ঘাটতি রয়েছে, পাশাপাশি সরকারের আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ঘাটতি রয়েছে। তারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন না। অন্যদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, দেশে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষ করে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় কিশোর-তরুণরা বেশি মারা যাচ্ছে। দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসাবে বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বেপরোয়াভাবে কিশোর-যুবকদের মোটরবাইক চালানো, বাইকচালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, বেপরোয়া মোটরবাইক চালানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং সড়ক-মহাসড়কে বিভাজক না থাকা অন্যতম। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ট্রাফিক মো. মুনিবুর রহমান জানান, ট্রাফিক পুলিশ প্রতিদিন বেপরোয়া মোটরবাইকারদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। তাছাড়া আইনেই বলা হয়েছে, মোটরবাইক চালাতে থাকতে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স। লাইসেন্স না পাওয়া গেলে মামলা দেয়া হয়। এ ছাড়া কেউ যদি লাইসেন্স নিয়ে অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করে, সেটাও মার্ক করে ট্রাফিক পুলিশ।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com