স্পোর্টস: শেখ পারভেজ রহমানের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি লং অফে খেলে এক রান নিলেন সাকিব আল হাসান। তিনি পৌঁছে গেলেন পরম কাক্সিক্ষত শতরানে। ক্রিজে পৌঁছে দুই হাত তুলে জবাব দিলেন অভিবাদনের। উদযাপন বলতে শুধু এটুকুই। কে বলবে, তিন অঙ্কের স্বাদ তিনি পেলেন প্রায় পাঁচ বছর পর! সাকিবের দীর্ঘ অপেক্ষা ঘোচানোর দিন খরা কাটিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেনও। তিনিও নিজেকে শতরানে রাঙাতে পেরেছেন পাঁচ বছর পর। পরে অবশ্য তাদের দুজনকেও ছাড়িয়ে দিনের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় ইনিংসটি খেলেছেন জাকির হাসান। দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মেরেছেন এক ডজন ছক্কা! ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে শুক্রবার এক দিনেই এসেছে বিধ্বংসী এই তিন সেঞ্চুরি। ছক্কার ছড়াছড়ি ছিল সবার ব্যাটেই। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে বিকেএসপি চার নম্বর মাঠে সাকিব খেলেন ৭৯ বলে ১০৭ রানের ইনিংস। গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে তার ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ৭ ছক্কা। আবাহনী লিমিটেডের হয়ে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে ফতুল্লায় মোসাদ্দেক উপহার দেন ৮ চার ও ১০ ছক্কায় ১০১ বলে ১৩৩ রানের ইনিংস। বিকেএসপি তিন নম্বর মাঠে প্রাইম ব্যাংকের জাকিরের ব্যাট থেকে আসে ১৩২ বলে ১৫৮ রানের ইনিংস। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে এই ইনিংসে তিনি চার মেরেছেন ৮টি, ছক্কা ১২টি! জাকির ও মোসাদ্দেকের এটি ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তবে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিবের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানই সবচেয়ে বড় খবর। বিশ্বকাপের আগে ব্যাট হাতে তার এমন ফর্মও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সুখবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে নিজের প্রস্তুতির জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুর অংশে না খেলে প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগে খেলার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। মাসখানেক বিরতির পর মাঠে নেমে গত মঙ্গলবার তিনি খেলেন ৪৯ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচেই করলেন এই সেঞ্চুরি। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। এরপর প্রায় ৫ বছরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৫৭ ইনিংস খেলেও আর তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি তিনি। এ সময়ে ১৪টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। দুইবার ৯০ পেরিয়েও সেঞ্চুরির আগেই থামেন তিনি। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ওই ইনিংসিটি স্বীকৃত ক্রিকেটেই ছিল সাকিবের সবশেষ সেঞ্চুরি। মাঝের পাঁচ বছরে ১৯৯ ইনিংসে ৩৩ বার পঞ্চাশ করলেও শতরানের দেখা পাননি তিনি। দীর্ঘ বিরতি কাটানোর দিন ¯্রফে ৭৩ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। বিকেএসপি চার নম্বর মাঠে শুক্রবার ১৯তম ওভারে ক্রিজে যান সাকিব। অষ্টম বলে তিনি নেন প্রথম রান। এরপর পারভেজের টানা তিন বলে চার, ছক্কা ও চার মারেন তিনি। তিন বাউন্ডারিতে ছন্দ পেয়ে যাওয়ার পর আর থামেননি সাকিব। মাসুম খানের বলে চমৎকার শটে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন সাকিব। পরের ওভারে মইন খানের বলও একই অঞ্চল দিয়ে ছক্কায় ওড়ান তিনি। পরে মাসুমের ওভারে তিন চারে ¯্রফে ৪৩ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। এরপর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। পঞ্চাশ থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ¯্রফে ৩০ বল খেলেন তিনি। আল আমিন জুনিয়রের বলে ছক্কার পর মারেন চার। হুসনা হাবিবের পরপর দুই বলে লং অন ও লফ দিয়ে মারেন ছক্কা। পরে মইনের বলে ছক্কা ও চার মেরে ৬৪ বলে ৯৬ রানে পৌঁছে যান সাকিব। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে কিছুটা সাবধানী হয়ে ওঠেন তিনি। ৪ রান করতে খেলেন ৯ বল। তিন অঙ্ক ছুঁয়ে অবশ্য আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আবদুল গাফফারের বলে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে লং অফে পারভেজের হাতে ক্যাচ দেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দশম সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান। সাকিবের সেঞ্চুরির সঙ্গে ইয়াসির আলি চৌধুরির ৫১ বলে ৭১ রানের সৌজন্যে ৫০ ওভারে ৯ উইকটে ২৮০ রানের পুঁজি পায় শেখ জামাল। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে গড়া একাদশে দায়িত্ব নিয়ে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে ক্যারিয়ারে আগের সেরা ১১০ রান টপকে যান আবাহনী অধিনায়ক। তার শুরুটায় অবশ্য এতটা বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত ছিল না। ফিফটি করেন তিনি ৪৮ বলে। এরপর তার ব্যাটে ধার বাড়তে থাকে ক্রমে। নাসুম আহমেদকে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ৯২ বলে। নাসুমের ওই ওভারে পরে আরও দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে রুবেল মিয়াকে মারেন চার বলের মধ্যে তিনটি ছক্কা। আউট হয়ে যান ওই ওভারেই। মোসাদ্দেক সেঞ্চুরি করে ফেরার পর আর কেউ দায়িত্ব নিতে পারেননি। ফলে পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলতে পারেনি আবাহনী। মোসাদ্দেকের আগে ঝড়ো ইনিংস খেলেন ওপেসার সাব্বির হোসেন। ৭ চার ও ৬ ছক্কায় তিনি করেন ৭৯ বলে ৯১ রান। ৪৪.৪ ওভারে ৩০৩ রানে অলআউট হয় আগের রাউন্ডেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলা আবাহনী। দিনের অন্য ম্যাচে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ছক্কার মালা গাঁথেন জাকির হাসান। তার ব্যাটেও শুরুতে ঝড়ের আভাস ছিল না। ওপেনার তামিম ইকবাল আউট হওয়ার পর চতুর্থ ওভারে ক্রিজে যান তিনি। ফিফটি করতে তার লাগে ৫৬ বল। পরের ফিফটিতে এগিয়ে যান তিনি বলপ্রতি রান করে। চলতি লিগে নিজের প্রথম ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চতুর্থ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ১০৬ বলে। এরপর উত্তাল হয়ে ওঠে তার ব্যাট। সেঞ্চুরি থেকে দেড়শতে ছুটে যান কেবল ২২ বলেই। শেষ পর্যন্ত আউট হন ১৫৮ রানে। সেঞ্চুরিতে তার ছক্কা ছিল ৬টি। পরের সময়টায় ছক্কা মারেন আরও ৬টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক ইনিংসে তার চেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড আছে শুধুই সৌম্য সরকারের। ২০১৯ সালে ঢাকা লিগে আবাহনীর হয়ে ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে তিনি ছক্কা মেরেছিলেন ১৬টি।
https://www.kaabait.com