স্পোর্টস: গেল এক বছরে দেশের ক্রিকেটে ওপেনিং ব্যাটিং পজিশন নিয়ে একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে টাইগার নির্বাচকরা ও হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তবে কেউই যেন তাদের মন মতো পারফর্ম করতে পারছিল না। ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ দুয়ারে কড়া নাড়ছিল। অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালও তখন অভিমান করে দলের বাইরে। সে সময় হুট করেই এশিয়া কাপের স্কোয়াডে যুক্ত করা হয় ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে এ আসরেই তার অভিষেক হয়। এরপর দলের সঙ্গে ভারতে যান বিশ্বকাপ খেলতেও। তারপর থেকে তাকেই ওপেনার হিসেবে দলের সঙ্গে রাখা হচ্ছে। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনায়ও ঢুকে যান তিনি। তার আগে চলতি মাসেই কুড়ি ওভারের এই ফরম্যাটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। তিনি বর্তমানে রয়েছেন দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে তার এই তারকা ক্রিকেটার হওয়ার পেছনেও রয়েছে এক গল্প তাতে জড়িয়ে আছে তানজিদের মায়ের শর্তও। টাইগাররা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে দেশ ছাড়ার আগে ভিডিও বার্তায় কথা বলে গেছেন ক্রিকেটাররা। সেই রেকর্ডেড ভিডিওগুলোই প্রতিদিন একটি করে প্রকাশ করছে বিসিবি। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল তানজিদ হাসান তামিমের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প। বলেন, ‘সব মা-বাবাই চান তার ছেলে পড়াশোনা করে অনেক ভালো কিছু হবে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার মা-বাবাও সেই স্বপ্নই দেখেছিল। গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসেছিলেন পড়াশোনা করার জন্য এবং জিলা স্কুলে পড়াশোনা করি। খেলার ওপর অনেক ঝোঁক ছিল। যখনই ছুটি পেতাম কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় পেতাম, খেলাধুলা করেছি। বাসায় অনেক প্রাইভেট টিচার আসত। স্কুলের পড়া স্কুল শেষে এসে বাসায় টিচার আসত। রাতেও টিচার আসতেন। তো সময় পাওয়া খুব কঠিন ছিল। আম্মু আমাকে বলতেন, স্কুল থেকে আসার পর যদি আমি টিচারদের পড়াটা শেষ করতে পারি, তাহলে আমাকে খেলতে দেবেন। আম্মু আমাকে আরেকটি কথা বলতেন, যদি আমি লেখাপড়ায় ভালো করতে পারি, তাহলে আমাকে একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেবেন, ব্যাট-বল কিনে দেবেন। আমিও পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম। এসব শর্ত পূরণ করলে আম্মু আমাকে খেলতে দিতেন।’ তবে তার মা খেলতে দিলেও ছেলের এমন খেলাধুলা পছন্দ করতেন না তার বাবা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তানজিদের আলো ছড়ানো দেখে তারা ছেলেকে সমর্থন দেওয়া শুরু করেন। এ নিয়ে এ ওপেনার বলেন, ‘আব্বু অফিস থেকে ফিরে হয়তো দেখতেন, আমি বাসায় নেই, টিচার এসে বসে আছেন আর আমি মাঠে খেলতে গিয়েছি। তো এজন্য বাবা অনেক রাগ করত। আসলে বাবা যে কঠোর হতো, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এখন আমার মা-বাবা অনেক সমর্থন দেন। ভালো ও খারাপ দুই সময়েই সমর্থন দেন।’ এদিকে গেল বছর ওয়ানডে ফরম্যাটে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই প্রায় নিয়মিতই দলের সঙ্গে দেখা যায় তাকে। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে চাপিয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৫টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টি। তবে তার আগে তিনি দেশকে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এনে দাওয়া টাইগার স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন। চার বছরের ব্যবধানে এত উন্নতি পাশাপাশি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও তার জীবনে আসেনি তেমন কোনো পরিবর্তন। বলেন, ‘আমার বন্ধুবান্ধব যারাই আছে তারা সবাই সেই ছোটবেলা থেকেই আমার সঙ্গে খেলত (ক্রিকেট), তারাও এখন গর্ব অনুভব করে আমার জন্য। গ্রামে কিংবা শহরে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয় এক সঙ্গে। যখন আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতি সবার একটা বিশ্বাস ছিল যে আমরা ভালো কিছু করব। তো আমরা সেটা করতে পেরেছি। সবাই এ ব্যাপার নিয়ে গর্ব অনুভব করে।’
https://www.kaabait.com