ডিবি অফিসে জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি করেন। তারা বলেন, ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে এলেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, ২৬ জুলাই ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি পুলিশ জোরপূর্বক মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসে। মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ছিল। ২৭ জুলাই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে সাইন্সল্যাব থেকে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। ২৮ জুলাই ভোরে সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে তার বাসা ভেঙে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপত্তা’র নামে ছয় সমন্বয়ককে সাতদিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল। আমরা গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম; আমরা আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূতভাবে আমাদেরকে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়। প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের ছাড়া যাবে না। বিবৃতিতে সমন্বয়করা বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারা দেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না। ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে এলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তারা বলেন, অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। পরবর্তীতে সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন। অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও বেশি সময় অনশনের পরে ডিবি প্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়। ০১ আগস্ট দুপুর দেড়টায় আমাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সাতদিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সাথে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনও শিক্ষার্থীদের ওপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটক নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের প্রতি আহŸান থাকবে, সরকারের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও দমন-পীড়নকে তোয়াক্কা না করে রাজপথে নেমে আসুন। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্ত হওয়া মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদারের নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সাংবাদিকদের নিয়ে তাদের হোয়াটস্যাপ গ্রæপে এই বিবৃতি দেন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ডিবি অফিস থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর বিকালে নিজেদের মতামত জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এর ঘণ্টাখানেক পর দুজনের আইডিই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তাদের নামে নতুন আইডি দেখা যাচ্ছে অনেক। এগুলোকে ফেক বলে দাবি করছেন বাকি সমন্বয়করা। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের আপডেট দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে খোলা হোয়াটস্যাপ গ্রæপে মেসেজ দেন রিফাত রশিদ। পরে সেটির বিষয়ে কিছু জানেন না এমন দাবি করে গ্রæপে মেসেজ দেওয়া হয় সারজিস আলমের নম্বর থেকে। এর কিছুক্ষণ পরেই তার মেসেজ ডিলিট করে দেন আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তার নম্বর থেকে এরপর আবারও একই মেসেজ দেওয়া হয়। এটি আবার ডিলিট করেন ফারহান নামের একজন। তারপর তাকে গ্রæপ এমডিন থেকেও রিমুভ করা হয়। দাবি করা হচ্ছে শরজিসের ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই।
https://www.kaabait.com