স্পোর্টস: দেখতে দেখতে এসে গেল আরও একটি কুড়ি-বিশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের পায়ের নিচে এখনো শক্ত মাটি সৃষ্টি হয়নি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কখনো কোনো নীল চাঁদের ক্ষণে সাফল্য এলেও বৈষয়িক টুর্নামেন্টে অর্জনের হাল খাতা শূন্য। তবুও ক্রিকেটপ্রেমী ১৬ কোটি বাংলাদেশ আশায় ঘর বাঁধে। কিন্তু প্রতিটি বিশ্বকাপ শেষে বালির বাধের মতো ভেঙে যায় আশার স্বপ্ন। টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ নিয়েও আশা আছে, স্বপ্ন আছে। চার গ্রæপে বিভক্ত ২০ দলের প্রথম রাউন্ড শেষে অন্তত গ্রুপ অব ফাইভে উত্তীর্ণ হওয়ার আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই বিশ্বকাপ প্রস্তুতি পর্বে দেশের মাটিতে দুর্বল জিম্বাবুয়ে দলের বিরুদ্ধে ৪-১ সিরিজ জয়ে অনুজ্জ্বল বাংলাদেশ এবং আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লজ্জাজনক ১-২ সিরিজ পরাজয় শঙ্কা। পারবে তো বাংলাদেশ স্বপ্নের সীমানায় পৌঁছাতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মের শেষ দুই স্তম্ভ সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শেষ বিশ্বকাপ। প্রত্যাশা অন্তত গৌরবোজ্জ্বল ক্রিকেট ক্যারিয়ারের গোধূলী বেলায় যেন স্মরণীয় কিছু করেন টিম টাইগার্স। স্কোয়াড নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা হলেও গাজী আশরাফ লিপুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচকমÐলীর হাতে খুব একটা বিকল্প ছিল বলা ঠিক হবে না, শুধু তানভীর আহমেদের স্থানে স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ এবং তানজিম সাকিবের স্থানে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে বিবেচনার সুযোগ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ পেস আক্রমণের মূল স্তম্ভ তাসকিন আহমেদ ১০০% ম্যাচ ফিট না থাকায় অপেক্ষাকৃত দ্রæত বেগে বোলিং করা তরুণ উদীয়মান পেস বোলারকে সুযোগ দেওয়া খুব একটা ভুল হয়েছে বলব না, আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপেক্ষাকৃত ধীর, ঘূর্ণি বোলিং সহায়ক উইকেটে মেহেদী মিরাজের বোলিং অধিকতর কার্যকরী হতো। ব্যাটসম্যান হিসেবেও টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার, লেট অর্ডারে ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় কাজে লাগতো। সবাই জানে মেহেদী মিরাজ সব ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের শঙ্কার কারণ দুর্বল এবং নড়বড়ে টপ অর্ডার। লিটন কুমার দাসের ব্যাটে রান খরা রীতিমতো উদ্বেগজনক পর্যায়ে পরিণত। সৌম্য সরকার মাঝেমধ্যে চটকদার ইনিংস খেললেও ধারাবাহিকতার অভাব। একমাত্র তরুণ তানজিদ তামিম উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিলেও বিশ্বকাপ মূল পর্বের চাপ কতটুকু নিতে পারবে নিশ্চিত নেই। আরো শঙ্কা অধিনায়ক নাজমুল শান্তর ব্যাটিং ফরম নিয়ে। বাট কথা না বলে শান্তর দল পরিচালনার ক্ষেত্রেও কিছুকিছু ভুলভ্রান্তি দৃষ্টিকটু লাগছে। বিশ্বমানের দলগুলোর বিরুদ্ধে টি-২০ ক্রিকেটে প্রতিদ্ব›িদ্বতা সৃষ্টি করতে হলে টপ অর্ডারের তিন জনের অন্তত এক জনকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে, পাশাপাশি প্রথম ¯েøাগ ওভারগুলোতে অন্তত ৬০-৭০ রান নিয়মিত তুলতে হবে। সাকিব, হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের অনিক, রিশাদ হোসেনে গড়া মিডল অর্ডার এবং লেট অর্ডার তখনি ম্যাচজয়ী স্কোর করতে পারবে অথবা বড় স্কোর তাড়া করে জয় ছিনিয়ে আন্তে পারবে, যখন টপ অর্ডার শক্তিশালী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলবে। তরুণ তৌহিদ হৃদয় তুখোড় ফরমে আছে তবে সাকিবের বাটিংয়ে মনঃসংযোগের অভাব সুস্পষ্ট। সাইলেন্ট কিলার খাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতেই তার প্রতি অবজ্ঞার জবাব দিয়ে চলেছে নিয়মিত। বর্তমান স্কোয়াডে নিঃসন্দেহে রিয়াদ সবার সেরা। সোনালি প্রজন্মের সাকিব, রিয়াদকে দলের হয়ে সেরাটা দিতেই হবে. জাকের অনিক এবং রিশাদ হোসেনের আক্রমণাত্মক কিছু ইনিংস নিয়ে আশাবাদী হবার যুক্তি আছে, তবে তরুণ, নবীন এই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে নিয়মিত সাফল্য আশা করা ঠিক হবে না। উইকেট যে কোনো ধরনের হোক না কেন আগে ব্যাটিং করলে অন্তত ১৮০-২০০ রান করতে হবে। আজকাল টি-২০তে নিয়মিত ২০০-২৩০ রান হচ্ছে এবং সেই টার্গেট হরহামেশা তাড়া করে ম্যাচ জয় হচ্ছে। জানি না তাসকিন শুরু থেকেই খেলতে পারবে কিনা। কিন্তু কোনো অবস্থায় ১০০% ফিট না হলে তাসকিনকে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। অথচ টুর্নামেন্টে কিছু অর্জন করতে হলে গ্রæপ পর্বে শ্রীলঙ্কা অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ের বিকল্প নেই। আসার কথা শেষ ম্যাচে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছে। তবে সঙ্গী হিসেবে শরিফুল এবং তানজিম সাকিবকে আঁটোসাঁটো বোলিং করতে হবে। বাংলাদেশের আক্রমণে ডান হাতি, বাঁ হাতি পেসার, ডান হাতি বাঁ হাতি অর্থডক্স স্পিনার এবং লেগ স্পিনার আছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো পুঁজি গড়তে পারলে বাংলাদেশ হয়ত শ্রীলঙ্কা অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার একটির বিরুদ্ধে জয় পাবে। এরপর নেদারল্যান্ডস এবং নেপালের বিরুদ্ধে সহজ জয় অর্জন করতে না পাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখি না। যা হোক ভালোমন্দর মেলবন্ধনে বাংলাদেশ একটি মাঝারি মানের দল। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাই হবে মূল অর্জন। প্রত্যাশা আর অর্জনের সীমানায় দাঁড়ানো বাংলাদেশকে শুভ কামনা।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক) তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান শাকিব, তানভীর ইসলাম।
রিজার্ভ: হাসান মাহমুদ, আফিফ হোসেন।
https://www.kaabait.com