বিনোদন: দেশের ওটিটি বাজারে স্বকীয় পরিচয় তৈরিতে সক্ষম হয়েছে চরকি। বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র ও সিরিজ উপহার দিয়েছে প্ল্যাটফরমটি। গত বছর অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ওপার বাংলার শিল্পী-কলাকুশলীদের নিয়ে কনটেন্ট তৈরিরও ঘোষণা দেয়। এর মধ্যেই জানা গেল, সেখানে বন্ধ হয়ে গেছে চরকির কার্যক্রম! খবর নিয়েছেন কামরুল ইসলাম। ২০২১ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশে যাত্রা করেছিল চরকি। গত শুক্রবারর প্রতিষ্ঠানটির তিন বছর পূর্ণ হলো। স্বাভাবিকভাবে দিনটিতে খোশমেজাজে চরকি পরিবার। তবে এই আনন্দের দিনেই নিরানন্দের খবর মিলল। গত বছরের ৪ অক্টোবর আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে কলকাতায় তাদের যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, তা বন্ধ হয়ে গেছে। গুঞ্জনটা অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। গত শুক্রবার চরকির হেড অব কনটেন্ট অনিন্দ্য ব্যানার্জি নিশ্চিত করলেন, খবরটি সত্য। ‘ওপারে দাপিয়ে এপারে’ চরকির কলকাতা অধ্যায়ের শুরুর দিনে হাজির হয়েছিলেন দুই বাংলার অনেক তারকা অভিনয়শিল্পী-নির্মাতা। বাংলা কনটেন্টের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন দুই বাংলার নির্মাতা-শিল্পীরা। কিন্তু সেই যাত্রা আদতে শুরুই হয়নি! অনিন্দ্য জানান, পশ্চিমবঙ্গে সিনে টেকনিশিয়ানদের যে সংগঠন রয়েছে, বাধাটা সেখান থেকেই। তাদের চাওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি পারিশ্রমিক। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম, টালিগঞ্জে পারিশ্রমিকের ভাগটা হয় ভাষাগত দিক বিবেচনায়। বাংলা কাজের একটা দর; হিন্দি, ইংরেজি বা অন্য ভাষার ক্ষেত্রে আরেক দর। যেহেতু চরকির কাজগুলো বাংলায়, তাই বিষয়টা নিয়ে আমরা ভাবিনি। পরে তারা (ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া) জানায়, বাংলাদেশ তো অন্য দেশ, সুতরাং পারিশ্রমিক বেশি দিতে হবে। এটা দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত! আমেরিকা থেকে এসে কাজ করলে না হয় এ হিসাবটা হতে পারে। কারণ টাকার মানের তফাত অনেক। তারা সেটা বহন করতে পারে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তো এমনিতেই ১০০ টাকার কাজ ১৩০ টাকায় করতে হয়। তার ওপর যদি আরো বেশি দিতে হয়, তাহলে তো মুশকিল।’ অনিন্দ্যর মতে, ফেডারেশনের চাহিদা মোতাবেক পারিশ্রমিক দিলে বাজেট যে পরিমাণ বাড়বে, তা কনটেন্ট মুক্তি দিয়ে কোনোভাবেই তুলে আনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তবে সমাধানের কোনো পথ যে দেখা যাচ্ছে, তা-ও নয়। আসলে কলকাতায় ফেডারেশন বেশ শক্তিশালী। তারা তাদের স্বার্থটা দেখছে, এটাকে আমি ভুল বলতে চাই না। তবে স্বার্থটা যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।’ ওপারে উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে চরকি ঘোষণা দিয়েছিল, তিন বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি কনটেন্ট নির্মাণ করবে। এর মধ্যে ‘লহু’ নামের একটি সিরিজের কাজও শুরু হয়েছিল। রাহুল মুখার্জির সিরিজটিতে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ ও পশ্চিমবঙ্গের সোহিনী সরকার। ডিসেম্বরে সিরিজটির শুটিং শুরু হয়েছিল। কিন্তু ফেডারেশন বেঁকে বসায় নিরুপায় হয়ে থামতে হয় টিমকে। অনিন্দ্য বলেন, ‘আমরা এখন ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ অবস্থায় আছি। দেখা যাক কী হয়। একটা কাজ (লহু) শুরু হয়েছিল, মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। চ‚ড়ান্তভাবে কার্যক্রমটা আসলে শুরু করাই যায়নি।’ এ প্রসঙ্গে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ আনা যেতে পারে-হইচই। পশ্চিমবঙ্গের এই ওটিটি প্ল্যাটফরম বাংলাদেশেও অনেক দিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের ক্ষেত্রে ঢাকায় এমন কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। এ বিষয়ে অনিন্দ্যর ব্যাখ্যা, “ঢাকায় হইচই-এর সমস্যা হয়নি, কারণ ‘হইচই বাংলাদেশ’ এখানকারই কম্পানি। আমরাও যদি ‘চরকি ইন্ডিয়া’ হতাম, তাহলে হয়তো এ রকম সমস্যার মুখে পড়তাম না। ঢাকায় একটা কম্পানি চালু করা যত সহজ, ভারতে ততটা নয়। প্রতিটি সরকারের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকে। সেসব বিবেচনায় আমরা ‘চরকি ইন্ডিয়া’ করতে পারিনি।” সব শেষে এসব জটিলতার সমাধানের প্রত্যাশাই রাখলেন ভারতের বিভিন্ন বিনোদন প্ল্যাটফরমে কাজ করা অনিন্দ্য। বলেন, ‘সমস্যাটার সমাধান জরুরি। এতে দুই বাংলার কাজের পরিধি ও বাজার বড় হবে। বাজার বড় হওয়া মানেই বেশি কাজ, আর ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে।’
https://www.kaabait.com