ইমদাদুল হক পাইকগাছা (খুলনা): জাতীয সংসদের প্রথম অধিবেসনে খুলনা-৬ আসনের এমপি জননেতা মোঃ রশীদুজ্জামান পাইকগাছা-কয়রায় দীর্ঘদিনের গলার ফাঁস লবনপানি মুক্ত মৎস্য চাষ ও টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি উর্থাপন করে চমক সৃষ্টি করেছেন। গতকাল বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবাগত এমপি’র গনমুখি বক্তব্য শুনে নির্বাচনী এলাকায় সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারী সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষনের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতিয় ৪ নেতা ও নির্বাচনী এলাকার সবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে বঙ্গবন্ধুর যোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা’ ও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় এলাকার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মোঃ রশীদুজ্জামান মৎস্য চাষ সম্পর্কে আইন প্রনয়ের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমি কখনো মৎস্য ঘেরের বিরুদ্ধে নই,শুধু লবন পানির ঘেরের বিরুদ্ধে। পুষ্টি দহিদা মেটাতে মৎস্য আমাদের খুবই প্রয়োজন,কিন্তু সেটা কৃষি ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করে নয়? লবন পানি তার জায়গায় “নদী ও সাগরে থাকুক”। তবে জনবসতি ও ফসিল এলাকায় নয়। উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘদিনের লবন পানির মৎস্য চাষ সম্পর্কে তিনি আরোও বলেন,মুক্তিযুদ্ধের পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকার মানুষের নিরাপদে বসবাস ও কৃষি ফসলের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বয়ং উপকূলীয় এলাকার পাউবো’র বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করে আলমতলায় বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন। এ পদক্ষেপের ফলে কৃষির বিকাশ ঘটে এ অঞ্চলে। কিন্তু ৮০ দশকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নামে সামরিক সরকার এরশাদের শাসনামলে বহিরাগত প্রভাবশালী ধনার্ড্য ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় মদদে বড় জমি মালিকদের ম্যানেজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ কেটে পোল্ডারে লবনপানি উত্তোলন করে চিংড়ি বা মৎস্য ঘের শুরু করেন। শুরুতে এর বিরুদ্ধে পরিবেশ কর্মী ও সচেতন রাজনৈতিক নেতা- কর্মীরা বিরোধীতা করলেও মিথ্যা মামলা,হামলা,গুন্ডা-পান্ডা ও তাদের একছত্র ক্ষমতা বলে ঘেরের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। এক সময় গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিনষ্ট হয় পরিবেশ, পর্যায়ক্রমে কৃষি ফসলের ক্ষতি হয,খাদ্য সংকট দেখা দেয়, দেশীয় প্রজাতির মৎস্য হারিয়ে যায়। হুমকির মুখে পড়ে জীব বৈচিত্র। মানুষের পেশার বদল হয়। বহু মানুষ কর্ম বিমুখ হয়ে পড়ে কাজের সন্ধ্যানে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছে। এখন পাইকগাছা-কয়রার বহু মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রম বিক্রি করে সংসার চালায়। তিনি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন,লবন পানির মৎস্য ঘেরের বছরে জমির মালিকরা ১ বিঘা জমির হারীর টাকা পায় ১০ হাজার টাকা। অথচ সেই ১বিঘা জমিতে মিষ্টি পানির মাছ চাষ,ধান-তরমুজ বা অন্যন্য ফসল উৎপাদন করে পাচ্ছে লক্ষ্যাধিক টাকা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ ভাবে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে লাভ জনক পদ্ধতি মৎস্য- ফসলে ফিরে আসা বলে তিনি মনে করেন। বহুবার প্রকৃতিক দুর্যোগে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এলাকায় লবন পানিতে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি, বাড়ি ঘর, অবকাঠামো, রাস্তাঘাট,সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। উপকূলীয় মানুষের জানমাল রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধসহ লবন পানির চিংড়ি ঘেরের যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেতে মিষ্টিপানির মৎস্য চাষ শুরু করে বহুমুখি কৃষি ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে এলাকার গরীব ও সাধারন মানুষের প্রানের দাবি করে আসছিল। সংসদ নির্বাচনের প্রচারণাকালে কয়রার একভুক্তভোগী অভিমানী এক নারীর উক্তি সংসদে তুলে ধরেণ ” সতিনের সাথে ঘর করা যায় কিন্তু লবন পানির সাথে সংসার করা যায়না” । এ অঞ্চলের সাধারন মানুষের গনদাবি লবন পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানির মৎস্য চাষের সাথে বহুমুখি ফসল ফলানোর প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবিতে রুপান্তরিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান জানান,৬ ফেব্রুযারী সংসদ অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী’র সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সাক্ষাৎ কালে উপকূলীয় এলাকায় লবন পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানির মৎস্য চাষের সঙ্গে বহুমুখি ফসল উৎপাদন লাভ জনক প্রসঙ্গটি তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী এটি গুরুত্বের সাথে ইতিবাচক ভাবে সাড়া দিয়েছেন।