ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা পানিতে নিমজ্জিত। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। চারদিকে বানভাসি মানুষের হাহাকারের মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রাণ ও সুপেয় পানির সংকট। কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যায় সবার প্রথমে প্লাবিত হয় জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বুড়িচংসহ অন্যান্য উপজেলা। এসব উপজেলার মধ্যে সারাদেশ থেকে উদ্ধার কর্মী ও ত্রাণ বেশি প্রবেশ করেছে দাউদকান্দি, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায়। অন্যদিকে ত্রাণ পাচ্ছেন না, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ। রোববার সকালে এ দুই উপজেলার বানভাসি মানুষেদের সঙ্গে কথা এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মুসফিকুর রহমান বলেন, “আজ (রোববার) পর্যন্ত জেলার ১৪টি উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৮ লাখ ২৪ হাজার ৩৯২ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৬১ হাজার ৪৪৫ জন।” বানভাসিরা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দুই উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র এবং কয়েকটি স্থানে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব ত্রাণে বন্য কবলিতদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। ফলে এ দুই উপজেলার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রচার কম থাকায়, ব্যক্তি ও সংগঠন কেন্দ্রীক ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ করা বাইরের স্বেচ্ছাসেবকরা একদম আসছেন না এ দুই উপজেলায়। মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা একেবারেই নোয়াখালীর পাশে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারাই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কুমিল্লায় আসছেন, তাদের সবাই কাছাকাছি অঞ্চল বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম বা আশপাশের উপজেলাগুলোতে প্রবেশ করছেন। মহাসড়ক থেকে দূরের উপজেলা হওয়ায় সেখানের এ উপজেলাগুলোতে বানভাসীদের কাছে যাচ্ছেন না কেউই। যার কারণে এ উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের মধ্যে হাহাকার বেড়েই চলেছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার গাজিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী আবদুল বাকী মিলন জানান, বুড়িচংসহ অন্যান্য উপজেলার আগে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পুরোপুরি প্লাবিত হয়। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেনি। আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এখনও কোন ত্রাণ পৌঁছায়নি। খাবারের কষ্টে মানুষ হাহাকার করছেন। তিনি বলেন, “দোকানপাটেও তেমন খাবার সামগ্রী নেই; থাকলেও দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে। ১৪-১৫’শ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে তদারকিসহ এ উপজেলাকে দ্রæত দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া দরকার।” আবুল কালাম আজাদ নামে মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, “এ উপজেলা আগে থেকেই পরিচিত জলাঞ্চল নামে। জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে এ উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় পানিতে মানুষ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। পানিবন্দি বানভাসীদের উদ্ধার করতে নৌকা ও স্পিডবোট দরকার। কিন্তু এখানে তেমন কোন সহায়তা এখনো আসেনি। মানুষ কষ্টে আছে।” “পুরো উপজেলার প্রায় সকল সড়ক পানির নিচে। পুকুর দিঘি থেকে শুরু করে মাছের ঘের-সবকিছুই প্লাবিত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ এখন অবর্ণনীয়।” গতকাল রোববার মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা জানান, তার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবনতির দিকে যাচ্ছে। পানি কিছুটা বেড়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে নৌকার প্রচুর সংকট রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাঠিয়ে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটা মানুষও অভুক্ত না থাকে। তবে আমাদের আরও অনেক সহায়তা দরকার।” এদিকে লাঙ্গলকোটের বাসিন্দা আজিম উল্যাহ হানিফ বলেন, এ উপজেলার সাতবাড়িয়া গত কয়েক দিন ধরে পানির নিচে। এলাকাটা অনেক ভেতরে হওয়ায় কেউই সেখানে যাচ্ছেন না। যার কারণে তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থা পুরো উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে। সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার কম থাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ থেকে এসব এলাকার বানভাসী মানুষজন বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। ফখরুল ইসলাম নামের নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জের এক বানভাসী বলেন, “নাঙ্গলকোট দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো সাংবাদিকও আসেন না। আমরা যে পানিতে তলিয়ে আছি, আমাদের খবরগুলো প্রচার করেন না। আমাদের এদিকে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির খুব প্রয়োজন। সরকারি সহায়তা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। মানুষ খাবার না পেয়ে কষ্টে আছে।” উপজেলার ঢালুয়ার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলছিলেন, “পুরো নাঙ্গলকোটে শুধু পানি আর পানি। অনেক অসুস্থ মানুষ, বৃদ্ধ মানুষ, গর্ভবতী নারীও আটকে আছে। তাদের উদ্ধার করা খুব দরকার, পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তাও। দেশের বিত্তশালী মানুষদের এদিকটার প্রতি একটু মনযোগ দেওয়ারও অনুরোধ করব।” নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, “এ উপজেলায় ত্রাণ সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে আমরা সেটা স্বীকার করছি। কিছু জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার। আমরা চেষ্টা করছি সকল মানুষকে সহায়তা দেওয়ার।” সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার কম থাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ থেকে এসব এলাকার বানভাসী মানুষজন বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। ফখরুল ইসলাম নামের নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জের এক বানভাসী বলেন, “নাঙ্গলকোট দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো সাংবাদিকও আসেন না। আমরা যে পানিতে তলিয়ে আছি, আমাদের খবরগুলো প্রচার করেন না। আমাদের এদিকে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানির খুব প্রয়োজন। সরকারি সহায়তা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। মানুষ খাবার না পেয়ে কষ্টে আছে।” উপজেলার ঢালুয়ার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলছিলেন, “পুরো নাঙ্গলকোটে শুধু পানি আর পানি। অনেক অসুস্থ মানুষ, বৃদ্ধ মানুষ, গর্ভবতী নারীও আটকে আছে। তাদের উদ্ধার করা খুব দরকার, পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তাও। দেশের বিত্তশালী মানুষদের এদিকটার প্রতি একটু মনযোগ দেওয়ারও অনুরোধ করব।” নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, “এ উপজেলায় ত্রাণ সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে আমরা সেটা স্বীকার করছি। কিছু জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার। আমরা চেষ্টা করছি সকল মানুষকে সহায়তা দেওয়ার।”
https://www.kaabait.com