ফকিরহাট প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসের অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নেওয়ার পর থেকে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একাত্তর টিভির বাগেরহাটের নিজস্ব প্রতিবেদক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী এখনও অসুস্থ। বিদেশে করোনার টিকা নিয়ে গবেষণায় ভয়াবহ যে সব তথ্য উঠে এসেছে তাঁর প্রায় সমস্ত প্রভাব পড়েছে তার শরীরে। দুই সপ্তাহ আগেও তাঁর মস্তিস্কে নতুন করে আরো ভংয়ঙ্কর উপসর্গ দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উপসর্গের সাথে লড়াই করছেন সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে তাঁর শরীরে পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করে। টিকা নিয়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিষ্ণু প্রসাদ অসুস্থ। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও তিনি এখনও সুস্থ হতে পারেনি। টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা তাঁর উপসর্গ নিয়ে গবেষণার কথা বলছেন। শীঘ্রই তিনি চিকিৎসার জন্য আবারো দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, সম্প্রতি বিদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে গবেষণায় ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। মস্তিস্ক,হৃদপিন্ড ও রক্তে জটিলতা বাড়ায় করোনা টিকা। এক গবেষণায় করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতি শনাক্ত করেছে বিজ্ঞানীরা। বিশে^র অন্যতম ব্যহত বহুজাতিক সংস্থা গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের তথ্যবধানে ওই গবেষণা পরিচালিত হয়। নিউজল্যান্ড ভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা করে।
এর পর ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি টিকায় পাশর্^প্রতিক্রিয়া রয়েছে। পাশর্^প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় সারাবিশ^ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া শুরু করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আর বাংলাদেশে এই টিকা নেওয়াদের মধ্যে কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া হয়েছে কিনা, তা খুঁজে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
করোনাভাইরাসের টিকার বিভিন্ন পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কারণে ৩৩ বছর ধরে সংবাদের পিছনে ছুটে চলা বিষ্ণু প্রসাদের সাংবাদিকতার গতি থামিয়ে দিতে চলেছে। সংবাদের খোঁজে সবসময় অগ্র ভাগে ছুটে চলা এই সাংবাদিক প্রতিনিয়ত টিকার পাশর্^পতিক্রিয়ার সাথে লড়াই করছেন।
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রর্ত্তী, একাত্তর টেলিভিনের পাশাপাশি ইউনাইটেড নিজ অফ বাংলাদেশ (ইউএনবি) এবং কালের কন্ঠ’র সাথে যুক্ত রয়েছেন। ইউএনবি থেকে তিনি পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, যে কোন টিকায় পাশর্^প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। করোনার টিকা গ্রহণ করার পর থেকে সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী অসুস্থ। একারণে তাঁর শরীরে যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। একই সাথে তাঁর অসুস্থতার কেস ফাইন্ডিংস বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে পাঠানো উচিত।
জানা গেছে,সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রথম দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাসের অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ড টিকা গ্রহণ করেন। এর ১ ঘন্টার মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পরেন। এর পর একের পর এক উপসর্গ দেখা দেয় তাঁর শরীরে। জ্বর, বুকেব্যাথা,শ্বাসকষ্ট, মাঝে মধ্যে নিশ^াস বন্ধ হয়ে আসে,মাথায় যন্ত্রনা, গলাব্যাথা, মুখ ও গলাশুকিয়ে আসা,কথা বলতে কষ্ট হওয়া,মেমোরিলস,শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পাড়াসহ নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। গত দুই সপ্তাহ আগে তার মস্তিস্কে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে মস্তিস্কে প্রচন্ড ভাবে ঝাকুনি দেয়।
টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ বিষ্ণু প্রসাদকে প্রথমে বাগেরহাটের চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। এর পর খুলনা ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিউতে তাকে দুই দফা ভর্তি করা হয়। তাকে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। একটানা ২১দিন বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন ওই সাংবাদিক। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। এর পর সে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণা ইনিস্টিটিউট অব কার্ডিঅ্যাক সাইন্স হাসপাতালে একবার, হায়দ্রাবাদে এআইজি হাসপাতালে দুইবার এবং ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে দুইবার চিকিৎসা নেয়।
অসুস্থ সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী জানান, টিকা গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত আমি একজন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। দেশব্যাপি উদ্বোধনের প্রথম দিন প্রথম যে ৫ জন টিকা গ্রহণ করে ছিল তাঁর মধ্যে আমি একজন। টিকা নেওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে আমার শরীরে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। দিন পার হওয়ার সাথে সাথে শরীরে উপসর্গের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এখনও সব উপসর্গ শরীরের রয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে মস্তিস্কে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে মস্তিস্কে প্রচন্ড ভাবে ঝাকুনিয়ে দেয় যা সহয্য করা অনেক কঠিন। অসংখ্য উপসর্গের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। এই ভাবে বেঁচে থাকা কঠিন।
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী আরো জানান, টিকা নেওয়ার আগে এবং পরে বেশ কয়েকবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কখনো আমার করোনা ধরা পরেনি। শরীরের যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে সবই টিকা নেওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে। আমি এখনও বেঁচে আছি বলে নানা উপসর্গের কথা বলতে পারছি। খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল বলে শুনেছি। এর পর স্বাস্থ্য বিভাগের আর কোন অগ্রগতি আছে কি না আমার জানা নেই। দেশে-বিদেশে নিজের চিকিৎসা করাতে এরিমধ্যে বেশ কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেছি। শীগ্রই চিকিৎসার জন্য আবারো দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছি।
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তীকে প্রথম চিকিৎসা দেওয়া বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসী জানান,প্রথিতযশা সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নেওয়ার পর পর অসুস্থ হয়ে পরেন। প্রথমে আমি নিজে তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তার চিকিৎসায় বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় বিএসএমএমইউতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর পর তিনি নিজ উদ্যোগে কয়েকবার ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও তিনি সুস্থ হতে পারেনি। অদ্যবধি সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ এবং বেশকিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছে।
ডা. প্রদীপ কুমার বকসী আরো জানান,টিকা নেওয়ার পর থেকে বিষ্ণু প্রসাদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, ভারসাম্যহীনতা, বুকে অনেক রকম ব্যাথা, মাঝে মাঝে জ¦র,মাথাব্যাথা, ওজন কমে যাওয়া,অরুচি,শরীরের মধ্যে একধরণের কম্পন,সমস্ত শরীরের ব্যাথাসহ বিভিন্ন উপসর্গের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন। যে হেতু তিনি করোনা টিকা নেওয়ার পরবর্তী সময় থেকেই নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ সে ক্ষেত্রে টিকার পাশর্^প্রতিক্রিয়ার বিষয় আছে কি না জানতে গবেষণা করা জরুরী।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী করোনার টিকা গ্রহণ করার আগে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। করোনার টিকা নেওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে নানা উপসর্গ নিয়ে তিনি অসুস্থ। যে কোন টিকার পাশর্^প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। টিকা গ্রহণের পর তার শরীরের যে সব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণা করা প্রয়োজন এবং তার অসুস্থতার বিষয় নিয়ে বিশ^স্বাস্থ সংস্থার সাথে যোগযোগ করা জরুরী। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবারো বিএসএমএমইউতে রেফার্ড করা হয়েছে। সাংবাদিক বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন ফকিরহাট সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
https://www.kaabait.com