• শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৫

এবারের আইপিএলের আবিষ্কার শশাঙ্ক সিং

প্রতিনিধি: / ৪৯ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

স্পোর্টস: বয়স পেরিয়ে গেছে ৩২। আইপিএলের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছে সেই ২০১১ সালে। পরে আইপিএলে আরও তিনটি দলে ঠিকানা পেয়েছেন শশাঙ্ক সিং। ম্যাচও খেলেছেন এবারের আগে। অথচ এই ব্যাটসম্যানকেই এবারের আইপিএলের আবিষ্কার বলছেন ইউসুফ পাঠান। চলতি আইপিএলে যেভাবে আলো ছড়াচ্ছেন পাঞ্জাব কিংসের এই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান, পাঠানের সঙ্গে দ্বিমত করার লোকও হয়তো খুব বেশি নেই। শশাঙ্ক আলোচনার শিরোণামে ছিলেন নিলামের সময়ই। তবে যেভাবে তিনি খবরে এসেছিলেন, তা কাক্সিক্ষত নয় কোনো ক্রিকেটারেরই। বলা হচ্ছিল, ভুল করে তাকে দলে নিয়েছে পাঞ্জাব! সেই শশাঙ্কই এখন শুধু পাঞ্জাবের নায়ক নয়, আইপিএলের চমকও। আগ্রাসী ব্যাটিং আর ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য দিয়ে নজর কেড়েছেন তিনি টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার পাঞ্জাবের বিশ্বরেকর্ড গড়া রান তাড়ায়ও বড় ভ‚মিকা তার। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে রান তাড়ায় পাঞ্জাবকে শুরুতে এগিয়ে নেয় প্রাভসিমরান সিংয়ের ২০ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। পরে জনি বেয়ারস্টোর ব্যাট উত্তাল হয়ে ওঠে। কিছুটা অবদান রাখেন রাইলি রুশো। কিন্তু লক্ষ্যটা এত বড় ছিল যে, প্রয়োজন ছিল শেষ দিকে আরও দারুণ কিছুর। সেই দাবি দুর্দান্তভাবেই মেটান শশাঙ্ক। ৪৮ বলে ১০৮ রান করে অপরাজিত থেকে ম্যাচের সেরা বেয়ারস্টো। রুশো করেন ১৬ বলে ২৬। এরপর শশাঙ্ক অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ৬৮ রান করে। তার ৮ ছক্কার তাÐবে ৮ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে জিতে যায় পাঞ্জাব। মৌসুমের শুরুর দিকে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ২০০ রান তাড়ায়ও এমন খুনে হয়ে উঠেছিল শশাঙ্কের ব্যাট। সেদিন ২৯ বলে অপরজিত ৬১ রান করে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে তিনি জিতিয়ছিলেন দলকে। পরের ম্যাচে করেছিলেন ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬। এরপর আরেক ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৪১। সব মিলিয়ে ৯ ইনিংসে তার রান ২৬৩। ফিনিশারের কাজটা ঠিকঠাক করে অপরাজিত ছিলেন ৫ ইনিংসেই। তার গড় তাই ৬৫.৭৫। স্ট্রাইক রেট ১৮২.৬৩। ছক্কা মেরেছেন এখনও পর্যন্ত ১৮টি। পরিসংখ্যানের বাইরেও, যেভাবে তিনি ক্রিজে গিয়ে বড় শট খেলেন, স্নায়ুর চাপকে পাত্তা না দিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন, এসবও চোখে পড়ার মতো। খেলোয়াড়ি জীবনে যিনি নিজেও পরিচিত ছিলেন বড় শটের জন্য, সেই ইউসুফ পাঠান মুগ্ধ শশাঙ্কের শটের বাহার দেখে। “এবারের আইপিএলের আবিষ্কার বলতে হবে শশাঙ্ক সিংকে। পরিষ্কারভাবে বল মেরে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে।”
এই পর্যায়ে আসতে কাঠখড় কম পোড়াতে হয়নি শশাঙ্ককে। আইপিএলে তিনি প্রথমবার দল পান সেই ২০১১ সালে। পুনে ওয়ারিয়র্সে থাকলেও সেবার ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। পরে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে ছিলেন ২০১৭ আসরে, রাজস্থান রয়্যালসে ছিলেন ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত। কোনো দলেই তিনি ম্যাচ পাননি একটিও। অবশেষে ২০২২ আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে খেলার সুযোগ পান। ১০টি ম্যাচের একাদশে রাখা হয় তাকে। ব্যাটিংয়ে নামেন ৫ ইনিংসে। বেশি কিছু করতে পারেননি শেষ দিকে নেমে। সব মিলিয়ে করতে পারেন ¯্রফে ৬৯ রান। এরপর গত আইপিএলে দলই পাননি। শুধু আইপিএলেই নয়, ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও দল থেকে দলে ঘুরেছেন তিনি ভাগ্য বদলের আশায়। মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার উঠে আসার বিখ্যাত টুর্নামেন্ট কাঙ্গা লিগে খেলে অপ্রথাগত টেকনিক ও ছক্কার ঝড় তুলে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু মুম্বাই ক্রিকেটের মূল ¯্রােতে সেভাবে জায়গা করে নিতে পারছিলেন না। পরে পন্ডিচেরিতে পাড়ি জমান। ভাগ্য খোলেনি সেখানেও। অবশেষে ছাত্তিসগড়ে গিয়ে কিছুটা থিতু হতে পারেন। এবার নিলামের আগে ভারতের একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট বিজায় হাজারে ট্রফিতে পরপর দুই ম্যাচে দেড়শ রানের ইনিংস খেলে নজর কাড়েন তিনি। এক ম্যাচে ১১ ছক্কায় ১১১ বলে করেন ১৫৪, পরেরটিতে ৭ ছক্কায় ১১৩ বলে ১৫২। নিলামের আগে সবশেষ ম্যাচে খেলেন ৫ ছক্কায় ৬২ বলে ৭৯ রানের ইনিংস। তার পরও নিলামে পাঞ্জাব দলে তাকে নেওয়া নিয়ে ছড়িয়েছিল বিভ্রান্তি। গত ডিসেম্বরে নিলামে সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে নাম ওঠে শশাঙ্ক সিংয়ের। বাংলার এই তরুণ ক্রিকেটার অবিক্রিত রয়ে যান। মিনিট তিনেক পরই নাম ওঠে আরেক শশাঙ্ক সিংয়ের। ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রূপিতে তাকে দলে নেয় পাঞ্জাব। পরের ক্রিকেটারের নাম যখন নিলামে ওঠে, তখন পাঞ্জাবের টেবিলে দেখা যায় মৃদু অস্থিরতা। পাঞ্জাবের সত্ত¡াধিকারীদের একজন প্রীতি জিনতা কিছু একটা ইশারা করেন নিলাম পরিচালনাকারীর দিকে। আরেক সত্ত¡াধিকারী নেস ওয়াদিয়া হাত নেড়ে বুঝিয়ে দেন যে, এই শশাঙ্ককে তারা দলে চান না। তাদের আগ্রহ ছিল অন্য শশাঙ্ককে ঘিরে। নিলাম পরিচালনাকারী তখন জানিয়ে দেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ আর নেই। বাধ্য হয়ে ওই শশাঙ্ককেই দলে রাখেন তারা। এটা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হলে পাঞ্জাব বিবৃতি দিয়ে জানায়, একই নামের দুজন ক্রিকেটার থাকায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তাদের দাবি, কাক্সিক্ষত শশাঙ্ক সিংকেই তারা পেয়েছেন দলে। পাঞ্জাবের সেই দাবি সত্যি ছিল নাকি তারা ¯্রফে তখন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। তবে এই মৌসুমে শশাঙ্ক যে তাদের সেরা প্রাপ্তিগুলির একটি, তা নিয়ে সংশয় নেই! শশাঙ্কের এমন পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ¡সিত তার সাবেক দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সেই সময়ের বোলিং কোচ ও দক্ষিণ আফ্রিকার পেস কিংবদন্তি ডেল স্টেইন। “শশাঙ্কের জন্য এর চেয়ে বেশি খুশি আর হতে পারতাম না। কয়েক বছর আগে আমাদের সঙ্গে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে ছিল যে। কঠোর পরিশ্রম করে, অসাধারণ এক ছেলে, নিজের সবটুকু উজাড় করে দেয় এবং সবসময় মুখে হাসি লেগেই আছে। দারুণ করেছো বন্ধু, দারুণভাবেই প্রাপ্য তোমার।”


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com