• শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৬

এআই এবার শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিবে !

প্রতিনিধি: / ২৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

ব্রিটেনে এই প্রথম চালু করেছে শিক্ষকবিহীন এআই শ্রেণিকক্ষ। যেখানে বাচ্চাদের এআই এর মাধ্যমে পাঠদান করা হচ্ছে। ডেভিড গেম কলেজ, একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করেছে যেখানে শিক্ষার্থীরা জিসিএসই পরীক্ষার জন্য কোর পাঠ্যসূচি এআই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিখছে। কলেজের সহ-প্রধান জন ডালটন বিশ্বাস করেন যে ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থায় এআই ব্যাপক পরিবর্তন আনবে এবং এটি অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। তিনি সবাইকে প্রযুক্তির সঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই এআই সিস্টেম শিক্ষার্থীদের শেখার ধরণ পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। এটি শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার সম্প্রতি ব্রিটেনকে একটি ‘এআই সুপারপাওয়ার’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। সরকার আশা করছে যে এই প্রযুক্তি শিক্ষকদের পাঠ পরিকল্পনা এবং মূল্যায়নে সহায়তা করবে। ডেভিড গেম কলেজের এই নতুন পরীক্ষামূলক শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষক নেই। বরং সেখানে ‘লার্নিং কোচ’ রাখা হয়েছে, যারা শিক্ষার্থীদের এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জীবন দক্ষতা শেখায়। যদিও তারা প্রশিক্ষিত শিক্ষক, তারা বিষয়বস্তুর গভীর জ্ঞান রাখেন না, বরং শিক্ষার্থীদের শেখার পথ নির্দেশ করেন। এই প্রকল্প বর্তমানে সাতজন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একজন কোচ নির্ধারিত রয়েছে। ডালটনের মতে, এই পরীক্ষাটি অনেকটাই ‘ঝুঁকিপূর্ণ একটি উদ্যোগ’ হলেও এটি ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি মনে করেন যে এআই শিক্ষার্থীদের জ্ঞান মূল্যায়নে গড়পড়তা শিক্ষকের তুলনায় বেশি নির্ভুল হতে পারে। অবশ্য, অনেক শিক্ষাবিদ এই পরিবর্তন সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রোজ লাকিন মনে করেন যে এআই শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, তবে এটি কতটা কার্যকর হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তিনি মনে করেন যে শুধুমাত্র এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই তা সফল হবে না, বরং এর যথাযথ প্রয়োগ ও যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষার অংশ হিসেবে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মাসা আলদালাতে প্রাথমিকভাবে সন্দিহান ছিলেন, তবে এখন তিনি মনে করেন এটি কার্যকর একটি শিক্ষা পদ্ধতি। তার মতে, একটি সাধারণ শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তে এই ব্যবস্থা অনেক বেশি দক্ষ এবং কার্যকর। এমনকি ইংরেজির মতো সৃজনশীল বিষয়েও এআই যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। জাতীয় শিক্ষা ইউনিয়ন (এনইউ) সরকারের ডিজিটাল টুল ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, তারা মনে করে যে এটি সফল করতে পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত ও আইটি পরিকাঠামো বিনিয়োগের প্রয়োজন। একইসঙ্গে, লাকিন প্রশ্ন তুলেছেন এই এআই ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত কার্যকারিতা সম্পর্কে। তিনি মনে করেন যে এই প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের সামাজিক শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ দিচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ডালটন এই প্রোগ্রামটির প্রশংসা করেছেন, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের শেখার দুর্বলতা চিহ্নিত করতে সহায়তা করছে। তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি ব্যবস্থা। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য বছরে প্রায় ২৭,০০০ পাউন্ড খরচ হয়, যা যুক্তরাজ্যের গড় বেসরকারি স্কুল ফি-এর তুলনায় ১০,০০০ পাউন্ড বেশি। অধ্যাপক লাকিন মনে করেন যে এটি একটি অভিজাত মডেল এবং সর্বসাধারণের জন্য এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও, প্রযুক্তির অসম প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি এবং তথ্য অবকাঠামোর অভাব অনেক শিক্ষার্থীকে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে পারে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের জন্য যে উচ্চ অনুপাতে কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পটি ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যদিও এটি ভবিষ্যতের জন্য নতুন একটি সূচনা তৈরি করতে পারে, তবে এখনই বলা সম্ভব নয় যে এটি সবার জন্য কার্যকর হবে কি না। গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই শিক্ষা পদ্ধতির কার্যকারিতা ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে। এই উদ্যোগ শিক্ষাবিদদের সামনে একটি বড় প্রশ্ন রেখে গেছেÑ শিক্ষকের ভূমিকা কীভাবে পরিবর্তিত হবে, এবং এআই কি আদৌ শিক্ষকদের সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করতে পারবে? ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা নির্ভর করবে এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং নৈতিক দিক বিবেচনার উপর।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com