বিদেশ : মণিপুরে তিন সন্তানের মাকে ধর্ষণ ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড় কমপক্ষে ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে জিরিবাম জেলার হামার উপজাতীয় গ্রাম জাইরাউনে সন্দেহভাজন আততায়ীরা এ ঘটনা ঘটায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ বছর বয়সি নির্যাতিতা ওই নারী গ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। তার স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। জিরিবাম পুলিশ প্রধানের কাছে ওই নারীর স্বামী নুগুরথানসাংয়ের দায়ের করা অভিযোগ অনুসারে, বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীকে মেইতি জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ধর্ষণের পর হত্যা করে। হামার জাতিগতভাবে কুকি-জো লোকদের সঙ্গে সম্পর্কিত, যারা ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে রাজ্যের মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘একজন নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। তার পোড়া লাশ পরিবারের কাছেই রয়েছে। এখন ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটিকে শিলচরে (আসামের) পাঠানোর চেষ্টা করছি। যাতে মৃত্যুর কারণ জানা যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। এ কারণে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তাকে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এবং কতগুলো বাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের একটি ভিডিওতে কিছু নারীকে জোসাংকিম হামারের ‘পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ’ বহন করতে দেখা গেছে। জিরিবাম এবং ফেরজাল জেলায় কর্মরত কুকি-জো নাগরিক সমাজ সংস্থা আদিবাসী উপজাতি অ্যাডভোকেসি কমিটি (আইটিএসি) এক বিবৃতিতে এই হামলা এবং নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নিন্দা করেছে। এ ছাড়া তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। আইটিএসি আরো বলেছে, তাদের রাজ্য বাহিনী এবং পুলিশসহ মণিপুর রাজ্য সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই। তাই জিরিবাম জেলা এবং মণিপুরের ফেরজাওল জেলার নিরীহ কুকি-জোমি-হামারদের রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। চুরাচাঁদপুর জেলার আদিবাসী উপজাতি নেতাদের ফোরাম ‘আইটিএলএফ’ একটি বিবৃতি দাবি করেছে, ‘মেইতেই বন্দুকধারীরা উপজাতীয় গ্রামে প্রবেশ করেছে এবং গ্রামবাসীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এরপর তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।’ আইটিএলএফ জানিয়েছে, ‘ঘটনার সময় অধিকাংশ গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালাতে সক্ষম হলেও ৩১ বছর বয়সি ওই নারীকে আটকে ফেলে সশস্ত্র ব্যক্তিরা। ভুক্তভোগী তিন সন্তানের মা। গোলাগুলির সময় তার ঊরুতে গুলি লাগে বলে তার স্বামী জানিয়েছেন। তিনি একজন শিক্ষকা ছিলেন…।’ আইটিএলএফ আরো জানিয়েছে, আততায়ীরা ওই নারীর স্বামী নুগুরথানসাংয়ের বৃদ্ধ বাবা-মা এবং চার থেকে আট বছর বয়সি তিন সন্তানকে চলে যেতে দিলেও তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে। শুক্রবার সকালে ওই নারীর পোড়া মরদেহ বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। হামলাকারীরা কয়েকটি কুকুরকেও মেরে ফেলে এবং সাতটি দুই চাকার গাড়ি নিয়ে যায়। হামারের শীর্ষ সংস্থা ‘দ্য হামার ইনপুই জেনারেল হেডকোয়ার্টার’ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মেইতেইয়ের সশস্ত্র ব্যক্তিরা জিরিবাম জেলার শান্তিপূর্ণ গ্রামে জাইরাউনে ঢুকে ১৭টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে।’ হমার ইনপুই আরো দাবি করেছেন, নিহত ওই নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার পায়ে গুলি করা হয়, নির্যাতন করা হয় এবং জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় ‘ এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামে মোতায়েন করা সিআরপিএফ কর্মীরা ২০টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সরেজমিনে তদন্ত শেষ করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট জেলার মেইতি এবং হামার জনগণের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করছিল, এর ঠিক আগেই এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলস এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ বলেও জানায় পুলিশ। গত ১৯ অক্টোবর একটি সশস্ত্র কুকি-জো-হামার গ্রুপ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এরপর কিছুদিন শান্ত থাকলেও বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সংক্ষিপ্ত স্থবিরতা ভেঙে গেছে। মেইতেই এবং কুকি-জোসের মধ্যে চলমান জাতিগত সংঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ২৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে, পাশাপাশি গত বছরের ৩ মে থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন, দ্য হিন্দু
https://www.kaabait.com