• মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫১

অন্যায়ের প্রতিবাদ করার গুরুত্ব

প্রতিনিধি: / ৩৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪

ধর্ম: সময়ে অন্যায়-অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকাশ্যে সংঘটিত হয় অনাকাক্সিক্ষত নানা ঘটনা। অথচ অন্যায়ের প্রতিরোধ করা ইমানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেক মুমিনের অন্যায়ের প্রতিরোধে এগিয়ে আসা কর্তব্য। অন্যথায় পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে আজাব। আখিরাতে সবাইকে হতে হবে বিচারের সম্মুখীন। সুতরাং অন্যায় প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। অন্যায় প্রতিরোধের পদ্ধতি : কল্যাণকামী সুখী পরিবার ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায়-অপরাধ প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করা নারী-পুরুষ সবার জন্য জরুরি। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো মন্দকাজ দেখতে পায় আর সে তা নিজ হাতে প্রতিহত করে, তবে সে দায়িত্বমুক্ত হলো। যদি তার হাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকে, কিন্তু মুখের মাধ্যমে বিরোধিতা করে, তবে সেও দায়িত্বমুক্ত হলো। আর যে ব্যক্তি মুখের মাধ্যমে বিরোধিতা করার ক্ষমতা না রাখে, কিন্তু মনে মনে বিরোধিতা করে, তবে সেও দায়িত্বমুক্ত হলো। আর এটা হলো দুর্বলতর ইমান।’ (নাসায়ী ৫০০৯) সবার জন্য সতর্কবার্তা : পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। উম্মতের জন্য রাসুল (সা.)-এর সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সে ব্যক্তি আমাদের নয় যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের শ্রদ্ধা করে না, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করে না। (তিরমিজি ১৯২১) অন্যায় কাজ প্রতিহত না হলে দ্রæত আজাব নাজিল হয়। আজাবের ধরন একেক সময় একেক রকম হয়। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোকরা! তোমরা এ আয়াতটি পড়ে থাকো, হে মুমিনরা! তোমাদের নিজেদের সংশোধনই তোমাদের কর্তব্য। তোমরা যদি হেদায়েতের পথে চলো তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সুরা মায়িদা ১৫০) অথচ আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন জালেমকে জুলুম করতে দেখে তখন তারা যদি তার হাত ধরে প্রতিহত না করে তবে আল্লাহতায়ালা অচিরেই তাদের সবাইকে আজাবে নিপতিত করবেন। (তিরমিজি ২১৬৮) যে কারণে দোয়া কবুল হয় না : নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই দোয়া করে থাকেন। কিন্তু অনেকের দোয়াই কবুল হয় না। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রধান একটি কারণ হলো সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ না করা। হজরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম! তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে থাকো। নতুবা অচিরেই আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর তার আজাব নিপতিত করবেন। তখন তোমরা তার কাছে দোয়া করবে, কিন্তু তিনি তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না। (তিরমিজি ২১৬৯)
শেষ দিবসের বিচার: কিয়ামতের ময়দানে সবাইকে হিসাবের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। স্বীয় কর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে মুক্তির কোনো উপায় থাকবে না। হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন নিজেকে হেয় জ্ঞান না করে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে কেউ নিজেকে কীভাবে হেয় জ্ঞান করবে? তিনি বললেন, সে কোনো বিষয় সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশের ব্যাপারে অবহিত থাকবে, অথচ সত্য কথা প্রকাশ করবে না। অতঃপর কিয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তাকে বলবেন, অমুক ব্যাপারে এই এই কথা বলতে তোমাকে কীসে বাধা দিয়েছিল? সে বলবে মানুষের ভয়ভীতি। অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলবেন, তোমাকে তো আমার ব্যাপারে অধিকতর ভয় করা উচিত ছিল। (ইবনে মাজাহ ৪০০৮)
শেখার আছে অনেক কিছু : পৃথিবী আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে সবাইকে ইমান ও আমল মজবুত করতে হয়। স্থান, কাল, পাত্রভেদে অন্যায় প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হয়। কৌশলে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। নতুবা অন্যান্যের অসৎ কর্মকাÐের প্রতিদানস্বরূপ নিজেকেও আজাবের মধ্যে পড়তে হয়। পূর্ববর্তী উম্মত থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। হজরত মালেক ইবনে দিনার (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা একবার হজরত জিবরাইল (আ.)-কে হুকুম দিলেন যে, অমুক অমুক বস্তির লোকসহ গোটা বস্তিকে উল্টে দিয়ে সবাইকে ধ্বংস করে দাও। হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! ওখানে তোমার অমুক এক নেককার বান্দা আছে। সে তো জীবনে এক পলক সময়ও তোমার নাফরমানি করেনি। (তাকেসহ কীভাবে ধ্বংস করব)। তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, তাদের সবাইকে উল্টে দাও। (কারণ তার সম্মুখে গুনাহ হতে দেখেও) তার চেহারা কখনো আমার আজাবের ভয় ও চিন্তায় মলিন হয়নি। (শুআবুল ইমান ৭৫৯৫)


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com